যত দিন যাচ্ছে ‘ঘৃণ্য রাজনীতি’ আর বিজেপি যেন ক্রমশই সমার্থক হয়ে উঠছে। লোকসভা ভোটের আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধী নেতা-নেত্রীদের মানহানি করতে তাঁদের বক্তব্যের ভিডিওকে বিকৃত করে অপপ্রচার চালাচ্ছিল তারা৷ ভোটের ফলপ্রকাশের পর তাদের নোংরামির দৌরাত্ম লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নোংরামির চরমতম সীমা অতিক্রম করলো পদ্মশিবির।
ব্যাপারটা হল, বিজেপি দলে নাকি অনলাইনে সদস্য হওয়া যাচ্ছে। এই ঘোষণার পর ইচ্ছুক ব্যক্তিগণ সদস্যপদ নিয়ে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে তাদের সদস্য হওয়ার প্রমাণ পোস্ট করছেন। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু বিজেপি কোনও কাজ করছে আর তাতে নোংরামি থাকবেনা সেটা কি হয়! তাই বিজেপির আইটি সেল, যারা রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় ভাবে নোংরামি ছড়াতে এক্সপার্ট তারা বিভিন্ন দলের নেতাদের এবং বিভিন্ন ধর্মের লোকেদের নামে বিজেপির সদস্য কার্ড বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। গতকাল বিকালেই ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে একগুচ্ছ ছবি। যেখানে কোনও ছবিতে দেখা যায়, বিজেপির সদস্য তালিকায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। সেখানে মমতার মেম্বারশিপ নম্বর ৯৫১২। আবার কোনও ছবিতে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর নাম। তাঁর নম্বর আবার ৪২০। শুধু তাই নয়, বিজেপির আইটি সেলের কল্যাণে বাদ যাননি শ্রী রামচন্দ্র, ‘জেসাস খাইস্ট’-ও!
এমনকী, ইসলাম ধর্মের প্রচারক হজরত মহম্মদও রয়েছেন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের নোংরামির সুবাদে তাঁর নাম হয়েছে ‘হজ্রত মহাউন্মাদ’! তবে সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার, এঁদের সকলের মেম্বারশিপ নম্বর হল ২৬২। এবং রাজ্যের নামের স্থানে ত্রিপুরা লেখা। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম বিতর্ক। মঙ্গলবারই বিধানসভায় নিজের ঘরে বসে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দল কতটা নীচে নামতে পারলে এই কাজ করতে পারে সেটা ভাবার সময় এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোথায় নেমেছে এরা! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে বলছে ভারতীয় জনতা পার্টির মেম্বারশিপ দেখিয়েছে! কতটা নীচে নেমেছে ভাবুন। আমরা জানি এরকম বেনামে ফেসবুক দিয়ে বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। দল থেকে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তৃণমূলের মহাসচিবের কথায়, ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করে, কর্মীদের বিভ্রান্ত করে বিজেপি যা করতে চাইছে, এটা গণতন্ত্রের একটা অশুভ দিক।’
আর ওই ছবি ও খবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে পৌঁছতেই তিনি চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর। এর আগেও তাঁকে নিয়ে নানা ধরণের কুরুচিকর ছবি, পোস্ট শেয়ার হওয়ায় কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও বন্ধ হয়নি বিজেপির তরফে এ হেন ভুয়ো পোস্টের রমরমা। নির্বাচনের আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে বিরোধীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার যে ফন্দি এঁটেছিল বিজেপি, নির্বাচন মিটলেও সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।