ম্যানচেস্টারে আজ সেমিফাইনালের মহারণ৷ সেমিফাইনালেও চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি৷ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আজ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে টস। ম্যানচেস্টারে সোমবার চড়া রোদ থাকলেও মঙ্গলবার ভোর থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা। আবার সকাল দশটার পরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সারা রাত কভার হয়ে থাকা পিচে সজীব ভাব থাকবেই। তা ছাড়া একেবারে তাজা উইকেটে খেলা হচ্ছে। সেখানে ভারতকে আগে ব্যাট করতে হলে বোল্ট-ফার্গুসন-হেনরিরা মারাত্মক হতে পারেন।
কে না জানে, টপ অর্ডারে ধস মানেই টলমল করবে ভারতের নৌকো। কখনও পরপর দুটো উইকেট পড়ে যায়নি বা ৫০-৪ অবস্থা থেকে মিডল অর্ডারকে ইনিংস সামলাতে হয়নি। সেই পরিস্থিতি সেমিফাইনালে বা ফাইনালে এলে টিম কী করবে, সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। জানা কথা, মিডল ওভার্সে ধোনি ব্যাট করতে এলেই কিউয়ি ক্যাপ্টেন বল তুলে দেবেন বাঁ হাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের হাতে। ড্যানিয়েল ভেত্তোরি এখনও নন, কিন্তু স্পিনার হিসেবে স্যান্টনার মাঝের ওভারগুলোয় বরাবরের আঁটসাঁট। সেখানে ধোনির স্ট্রাইক রোটেট করার সমস্যা ফ্যাক্টর হতেই পারে।
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্ল্যাক ক্যাপসের কাঁটা বলতে শীর্ষবাছাই রোহিত শর্মা। টুনার্মেন্টে ৬৪৭ রান, পাঁচটা সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আগের দিন অপশনাল প্র্যাক্টিস আসেননি রোহিত। ফলে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তাঁর ছবি লম্বা লম্বা লেন্সে ধরা পড়েনি।
রোহিতই যে শুরুতে নিউজিল্যান্ড বোলিং আক্রমণের টার্গেট হতে যাচ্ছেন, সেটা আন্দাজ করার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। তাঁকে প্রথমেই ফেরোনার জন্য কেন উইলিয়ামসনের সেরা বাজি অবশ্যই বাঁ হাতি ট্রেন্ট বোল্ট। ওভালে প্রস্তুতি ম্যাচে রোহিতের উইকেটটা বোল্টই তুলেছিলেন। ইনিংসের শুরুতে বরাবরই একটু নড়বড়ে দেখায় রোহিতকে। কিন্তু প্রথম ২০-২৫ বল সামলে নিতে পারলে তাঁকে আউট করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত বছরও ইনিংসের মাঝপথে আটকে গেলে সোজাসুজি অন্ধের মতো আক্রমণের রাস্তায় চলে যেতেন রোহিত। এই বিশ্বকাপে ইনিংসের মাঝপথে স্থিতধী এবং কোনও ভাবেই ধৈর্য না-হারানো তাঁকে সুদে আসলে রান দিয়ে যাচ্ছে। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে, ব্যাটিং কী করে এত সোজা হতে পারে। তবু সেমিফাইনাল হল সেমিফাইনাল। এক বলের খেলায় সামান্য একটা খোঁচাও চিত্রনাট্যে বড় মোচড় এনে দিতে পারে। ক্রিকেটে ‘ল অফ অ্যাভারেজ’ বলেও একটা কথা আছে। অবধারিত তার অপেক্ষায় থাকবে ব্ল্যাক ক্যাপসরা।
আগের রাতে টানা বৃষ্টি হলে উইকেট ভেজা থাকবে, আউটফিল্ডও। সেখানে স্পিনারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় পেসার হিসেবে খেলতে পারেন ভুবি। কিন্তু সকালের দিকে রোদ উঠে গেলে তা আর হবে না। বুমরার সঙ্গে দ্বিতীয় পেসার হিসেবে তা হলে খেলবেন সামি।
অপশনাল প্র্যাক্টিসে জাডেজা ছিলেন না, কিন্তু তাঁর খেলার সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে লোয়ার অর্ডার ব্যাটিংকে মজবুত করার জন্য। এ ছাড়াও তিনি টিমের হয়ে অন্তত ২০টা রান বাঁচাবেনই। জাডেজাকে খেলাতে হলে দুই রিস্ট স্পিনারের মধ্যে একজনকে বসাতে হবে। যা ইঙ্গিত, বিরাটের প্রথম পছন্দ চাহল। এ ছাড়া টিমকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কেদার না কার্তিক। আগের ম্যাচে কার্তিক খেলেছিলেন, কিন্তু ব্যাটিং আসেনি। দু’জনকেই নেটে দেখলাম, কেদারের বোলিং অপশন মাথায় থাকলে তাঁর দিকে পাল্লা ঝুঁকতে পারে। নয়তো কার্তিক।
প্রথম এগারো যা-ই হোক, টস জিতে কোনও টিম ৩০০ তুলে দিতে পারলে রান তাড়া করা সহজ হবে না। গোটা বিশ্বকাপেই চলেছে এই ট্রেন্ড। যেখানে বিগ ম্যাচে রান তাড়া করার চাপে ইনিংসের মাঝপথে একটা বা দুটো বড় ভুল করে ফেলছে টিমগুলো আর সেখান থেকে ফিরে আসার সুযোগ পাওয়া যায়নি।
দুটো টিমের ফর্ম দেখলে ভারত এগিয়ে, কিউয়িরা আন্ডারডগ। কিন্তু বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আগে এই তথ্যের কোনও মানে দাঁড়ায় না। এই পর্যায়ে স্কিলের তফাত খুব বেশি হয় না। তফাতটা হয়ে যায় ম্যাচ সিচ্যুয়েশনকে কোন টিম কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রত্যাশার চাপটা যে ভারতের উপরে অনেক বেশি, সেটাও কারও অজানা নয়।