কলকাতাবাসীর কাছে বেহালা বলতে প্রথম যে জিনিসটা মাথায় আসে সেটা হল ‘মহারাজ’। ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ, রাজ-শাসনের অবলুপ্ত হয়েছে অনেকদিন। কিন্তু ক্রিকেটের ইতিহাসে ‘মহারাজ’ আজও আছেন। সৌরভ গাঙ্গুলি। সেই ‘মহারাজ’- ৪৭তম জন্মদিনেও তিনি অদ্বিতীয়। ভারতীয় ক্রিকেটের পরিভাষা পাল্টে গেছিল এই বাঙালির হাত ধরে। আজ বিশ্ব ক্রিকেটের আকাশে ভারত যে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র তার পেছনে অন্যতম কান্ডারি তিনিই। প্রতিভা, জেদ, আগ্রাসন, বুদ্ধি, দক্ষতার মিশ্রণের নাম সৌরভ গাঙ্গুলি।
১৯৭২ সালে এইদিনে কলকাতার বুকে এই নক্ষত্রের জন্ম হয়। দাদা স্নেহাশিষ গাঙ্গুলির অনুপ্রেরণা ও নিজের অদম্য ইচ্ছার জেরে ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয় তাঁর। ক্রিকেট জীবনের প্রথম থেকেই চড়াই-উত্তরাই লেগেই ছিল তাঁর। ১৯৯২ সালে ক্রিকেট জীবনে অভিষেক হলেও বাদ পড়তে হয় এক ম্যাচ পরেই। ভেঙে না পড়ে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন কলকাতার রাজপুত্রর। ২০ই জুন, ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষেক ঘটে আবার। সেই তাঁর প্ৰমাণ করার শেষ সুযোগ। আর তিনি সেই সফরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছিলেন যা আজও স্মরণীয়।
বাঁহাতি ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অদ্যাবধি ভারতের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক বলে বিবেচিত হন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেবলমাত্র একজন আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন অধিনায়কই ছিলেন না, তাঁর অধীনে যে সকল তরুণ ক্রিকেটারেরা খেলতেন, তাঁদের কেরিয়ারের উন্নতিকল্পেও তিনি প্রভূত সহায়তা করতেন। যুবরাজ সিং, হরভজন সিং, বীরেন্দ্র সেওয়াগ, নেহেরা, জাহির খান এক ঝাঁক তারকার উত্থান ‘দাদা’-র হাত ধরে। বলা চলে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জেতা টিমে সৌরভ না থেকেও নেপথ্যে কোথাও যেন লুকিয়ে ছিলেন।
১৯৮৩ এর পর দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল ভারত সৌরভের হাত ধরে। বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ভারতকে দেখিয়েছেন তিনি। না বলা অনেক গল্প তিনি লিখেছেন ভারতীয় ডেসিংরুমে। এখানের ভারিক্কি মেজাজের পরিবর্তে এসেছিল উল্লাসের জোয়ার।
এই এহেন মানুষও হল চক্রান্তের শিকার। ক্রিকেট জীবনের শেষ লগ্নে এসে বাদ গেল দল থেকে। প্রশ্ন ওঠে বাঙালি বলে কি প্রাপ্য সম্মান পেলেন না সৌরভ? তবু হার মানেননি তিনি। অবসর নেননি। অবসাদকে জেদে পরিণত করে ফিরে আসার লড়াই চালিয়ে গেছেন। না তিনি হেরে যাননি। ফিরে এসেছেন ক্রিকেট মাঠে। পুনঃঅভিষেক ঘটে মহারাজের। আর সম্মানের সঙ্গে শেষ করেন ক্রিকেট জীবন। এই হার না মানা মানুষটির গল্প সিনেমার চিত্রনাট্যে জায়গা পায় না, তবে অনেক নতুন প্রতিভার কাছে আজও অনুপ্রেরণা। আজও ভারতীয় ক্রিকেটে বাঙালিরা অবহেলিত। প্রতিভা থাকলেও সহজে সুযোগ মেলে না রাজনীতির গ্যাড়াকলে। তাঁদের জন্যও আপ্রাণ চেষ্টা চালান বাংলা ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান। ৪৭ এর সৌরভ আজও জেদের গল্প শোনান ভক্তদের।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত