যে কোনও অপকর্ম বা বেআইনি কাজেই সিদ্ধহস্ত গেরুয়া শিবির। এর আগে বাংলায় শিশু পাচারের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল গেরুয়া শিবিরের নেতা-নেত্রীদের। আর শিশু পাচারের পর এ বার নারী পাচারের ঘটনায় নাম জড়াল এক বিজেপি নেত্রীর। রবিবার আলিপুরদুয়ারের বারুইপাড়া গ্রামে সাড়ে ছ’ফুট লম্বা এক মহিলাকে টোপ দিতে এসে ধরা পড়ে তিন যুবক। তাঁদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি কোচবিহারে, একজনের বাড়ি কামাখ্যাগুড়িতে। অভিযুক্ত তিন জন-সহ স্থানীয় এক বিজেপি নেত্রীর নামে ভাটিবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে এফআইআর করেছেন বছর ৪৫-এর উমা সাহা (নাম পরিবর্তিত)।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মনোরঞ্জন বর্মন বলেন, ‘ওরা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সাহাদের বাড়িতে এসেছিল। তারা নারী পাচার অথবা মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের সন্দেহ।’ উমার মা সীতা সাহা (নাম পরিবর্তিত) বলেন, ‘পরিবারে উপার্জনের কেউ না-থাকায় পাঁচ জামাই আমাদের তিন জনের দেখভাল করে। ওই যুবকদের কথার মধ্যে অসঙ্গতি লক্ষ করে পঞ্চায়েতের সদস্যকে খবর দিই। মেয়েটা আমার বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।’ এদিন ধৃত তিনজনের দশ দিন পুলিশ হেফাজতে নির্দেশ দিয়েছে আলিপুরদুয়ার এসিজেএম আদালত। তবে পাচারের ঘটনায় অভিযুক্ত ওই বিজেপি নেত্রীর নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ২০১৭-র ১৯ জানুয়ারি জলপাইগুড়ি হোম থেকে শিশু পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বিজেপির যুব মোর্চার নেত্রী জুহি চৌধুরীকে। তার সঙ্গে বেসরকারি ওই হোমটির কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তী এবং জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সস্মিতা ঘোষকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে নাম উঠে আসে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র। অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ারের গরিব পরিবারটিকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা চলছিল গত এক বছর ধরেই। কখনও চাকরির টোপ, আবার কখনও মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অপরিচিত মানুষের আনাগোনা চলছিল সাড়ে ছ’ফুট লম্বা উমাদের বাড়িতে।
উল্লেখ্য, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার কারণে ছোট ছোট পাঁচ বোনের বিয়ে হলেও ৪৫ বছরেও পাত্র জোটেনি উমার। মা-বাবার কাছে ‘বোঝা’ হয়ে থাকা মেয়েটিকে ‘উদ্ধার’ করতে রবিবার তিন আগন্তুক তাঁদের বাড়িতে ঢুকে প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির টোপ, পরে নগদ কুড়ি লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী তাঁকে নিয়ে মাতৃবন্দনা করা হবে বলেও জানায় আগন্তুকরা। এক এক বার এক এক রকম কথা বলায় সন্দেহ হয় উমার মা সীতার। কেউ কিছু বোঝার আগে তিনি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মনোরঞ্জনকে ডেকে নিয়ে আসেন। টোপ দিতে আসা ছয় জনের মধ্যে তিনজন তখন বসেছিল বোলেরো গাড়িতে।
পঞ্চায়েত সদস্যর জেরায় চাপে পড়ে যায় ওই তিনজন। ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমতে শুরু করে বাড়িতে। বিপদ আঁচ করে গাড়িতে থাকা তিনজন চম্পট দেয়। বাড়ির ভেতরে থাকা তিন প্রতারককে ধরে ফেলে গ্রামের বাসিন্দারা। খবর যায় ভাটিবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে। জেরায় সন্তুষ্ট না হয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত ঝুটন সরকার কোচবিহারের ডাউয়াগুড়ির বাসিন্দা, সুশান্ত অধিকারীর বাড়ি কোচবিহারের নাগুরহাটে, তৃতীয় অভিযুক্ত সুভাষ বর্মণ আলিপুরদুয়ারের কামাখ্যাগুড়ির বাসিন্দা। এঁরা সকলেই বিজেপি সমর্থক বলে জানা গেছে। জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘ধৃত তিন জনকে জেরা করে প্রকৃত উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করছি। পলাতক তিনজনকেও গ্রেফতার করা হবে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি রহস্যের কিনারা করা সম্ভব হবে।’