নির্বাচনী প্রচারে অধিকাংশ বিজেপি নেতৃত্বের মুখে উঠে এসেছিল দেশপ্রেমের কথা। ইস্যু হয়েছিল ‘সেনা’। রাজনৈতিক মহলের এক বড় অংশের মতে এই ইস্যুর জোরেই দ্বিতীয় বারের জন্য দিল্লীর মসনদে ফিরেছে মোদী সরকার। কিন্তু ভোট মিটতেই দেখা গিয়েছিল, কার্গিল যুদ্ধে দেশের হয়ে লড়াই করা প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট মহম্মদ সানাউল্লাকেই ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করেছিল আসামের বিজেপি সরকার। সানাউল্লার পর এবার ‘বিদেশি’ তকমা লাগতে চলেছে আর এক জওয়ানের গায়ে। এবং ঘটনাচক্রে তিনিও মুসলিম।
হ্যাঁ, ২৫ বছর কেন্দ্রীয় আধা সেনাবাহিনী সিআইএসএফ জওয়ান হিসাবে চাকরি করার পর এবার নিজের নাগরিকত্ব খোয়াতে চলেছেন মামুদ আলি। ইতিমধ্যেই ‘ডি ভোটার’ (সন্দেহজনক নাগরিক) হিসাবে নোটিস ধরানো হয়েছে তাঁকে। মামুদ জানিয়েছেন, ১৯৪৭ সাল থেকে তাঁর নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রমাণ রয়েছে। তবু হয়রানি চলছে। শুধু সানাউল্লাহ বা মামুদই নয়। আসামের যত্র তত্র সংখ্যালঘুদের গায়ে বিদেশি তকমা লাগানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত। বয়স ৭ হোক বা ৭৫, হয়রানির হাত থেকে মুক্তি নেই কারও। আর যেখানে সেনা বা আধাসেনা জওয়ানরাই ছাড় পাচ্ছেন না হয়রানির হাত থেকে, সেখানে অন্যান্য ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও যে এনআরসির বলি হবেন, তা বলাই বাহুল্য।
যেমন হয়রানির শিকার দরং জেলার মাগুরমারি গ্রামের জাভেদ আলিও। তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে অভিযোগ নেই। কিন্তু ৭ বছরের ওই শিশুর নাম নেই এনআরসির অতিরিক্ত খসড়া তালিকায়। ক্লাস ওয়ানের এই শিশুটি কীভাবে ‘বিদেশি’ হল বুঝতে পারছেন না পরিবারের কেউ। আবার চূড়ান্ত হয়রানির শিকার কোকরাঝাড় জেলার গোসাইগাঁওয়ের শিমুলতাপুর গ্রামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ তাচারালি শেখও। ১৯৬৬ থেকে তিনি আসামের ভোটার। তবু ৫৫ দিন জেল খাটতে হল তাঁকে। ৬ মার্চ তাঁকে বিদেশি বন্দীশালায় পাঠায় ফরেনার্স ট্রাইবুনাল। গুয়াহাটি হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করায় অবশেষে রবিবার তিনি ছাড়া পেয়েছেন।