গত ৫ বছরে তাঁর বছরে ২ কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি জুমলায় পরিণত হয়েছে। চাকরি তো হয়ইনি, উল্টে মোদী জমানায় ধুঁকতে থাকা কয়েকটি সংস্থার ঝাপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ খুইয়েছেন বহু মানুষ। তবে শুধু বেসরকারি সংস্থাতেই নয়, এবার ছাঁটাই-যজ্ঞ শুরু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাতেও।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্থান স্টিলওয়ার্কস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সদর দফতর কলকাতা থেকে দিল্লীতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি সংস্থাটির চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ছাঁটাইয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। তবে সংসদে তৃণমূল সাংসদদের প্রতিবাদে চাপে পড়ে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল কেন্দ্র। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থটির কর্তারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, এখানেই থাকছে হিন্দুস্থান স্টিলওয়ার্কস। চাকরি যাচ্ছে না কোনও কর্মী বা অফিসারের। স্বভাবতই খুশি ছিলেন কর্মীরা। কিন্তু সেসব ঘটনা এখন অতীত।
গত আগস্টে কলকাতায় শ্রম মন্ত্রকের দফতরে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি অনেকটাই। বর্তমানে সংস্থার চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৪৬ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীকে। তাঁদের দাবি, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাঁদের সরানো হয়েছে কাজ থেকে। তবু কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দফতরে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দফতরেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দিল্লী পর্যন্ত দরবার করছেন বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ, যিনি এখানকার কর্মী সংগঠনের সভাপতি। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও।
ইস্পাত মন্ত্রকের আওতায় থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্থান স্টিলওয়ার্কস ১৯৬৪ সালে পথ চলা শুরু করে, যার মূল অফিস হেস্টিংসে। এখান থেকেই দেশের ২৬টি শহরে সংস্থার শাখা অফিসগুলির পরিচালনা করা হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তাদের নতুন ভবনের জন্য কসবায় জমিও দেন। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় দীর্ঘ কয়েক বছর লোকসানে চলার পর যখন হাল ফেরে সংস্থাটির, তখনই কেন্দ্রীয় সরকার উল্টো সুরে গাইতে শুরু করে।
কর্মীদের বক্তব্য, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেখানে সংস্থাটি ১১৫ কোটি টাকা লাভের মুখ দেখেছিল, সেখানে বছর শেষে ক্ষতির হিসেব দেখিয়ে তাকে নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের আওতায় থাকা এনবিসিসি (আই) লিমিটেড নামে আরও এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপরই সিদ্ধান্ত হয়, সংস্থাটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে দিল্লীতে। ফলে কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগতে থাকেন কর্মীরা। শুরু হয় আন্দোলন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে লোকসভায় বিষয়টি তোলেন সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। জানতে চান, কোন যুক্তিতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে হিন্দুস্থান স্টিলওয়ার্কস? এরপর বিষয়টি নিয়ে ধীরে চলো নীতি নেয় কেন্দ্র।
কিন্তু দিল্লী বেশিদিন ধৈর্য রাখতে পারেনি। তারা কয়েক মাস অপেক্ষা করে সদর দফতর কলকাতা থেকে সরানোর ব্যাপারে আদাজল খেয়ে লাগে। সংস্থার ফাইনান্স অফিসার হিসেবে দায়িত্ব ছিল যাঁর হাতে, সেই কনট্রাকচুয়াল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ লাহিড়ি বলেন,
গোটা বিষয়টির প্রতিবাদ করায় আমাদের তিনজনকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বরখাস্ত করা হয়। পরে কলকাতায় লেবার কমিশনারের অফিসে বিষয়টি নিষ্পত্তি হল বলেই আমরা ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে আমাদের চাকরিতে নেওয়া তো হয়নিই, বরং গোটা দেশ থেকে ৪৬ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন যে, কেন এই ছাঁটাই বেআইনি, তা জানিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। বিষয়টি নিয়ে দিল্লীতে সংস্থার সদর দফতরে বৈঠক করেছেন আমাদের ইউনিয়নের সভাপতি তমোনাশ ঘোষ। আমাদের কাজে নেওয়া হবে, এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। গত ৪ জুলাই কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনারের অফিসে একটি বৈঠক হয় সংস্থার কর্তা এবং কর্মী ইউনিয়নের সঙ্গে। কিন্তু সেখানেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। আর প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফেও এখনও চিঠির কোনও উত্তর আসেনি। বিষয়টিকে তিনি যে একেবারে আমলই দিচ্ছেন না, এর থেকেই তা স্পষ্ট।