দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর পর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট মোদী সরকারের। ফলে অনেক প্রত্যাশা ছিল দেশবাসীর। তবে দেশের প্রথম পূর্ণ সময়ের মহিলা অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে যে বাজেট পেশ করলেন নির্মলা সীতারামন, তাতে ছিটেফোঁটাও প্রত্যাশা তো পূরণ হলই না। বরং এই বাজেট দেখে দেশের শিল্পমহল ও অর্থনীতিবিদদের অনেকেরই প্রশ্ন, আর্থিক বৃদ্ধির উচ্চ হার ছোঁয়া বা কাজের সুযোগ তৈরির দিশা কই? আর্থিক সমীক্ষায় বেসরকারি লগ্নির কথা বলা হলেও তার পথ কতটা মসৃণ হল? উৎপাদন ও চাহিদার যে শ্লথ গতি তৈরি হয়েছে, বাজেটের দাওয়াইতে সেই দুষ্ট চক্রও সহজে ভাঙবে কি না নিশ্চিত নন তাঁরা।
আইআইএম-কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক পার্থ রায়ের বক্তব্য, বাজেটে আগের সরকারের প্রকল্পের ধারাবাহিকতারই ইঙ্গিত রয়েছে। তবে ৫ লক্ষ কোটি অর্থনীতিতে পৌঁছতে হলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমপক্ষে ৮ শতাংশ হতে হবে। কিন্তু আগের বছর ও এ বছর তা তার চেয়ে অনেক কম থাকায় আগামী দিনে সেই ঘাটতি পূরণে বৃদ্ধির হার অন্তত ৮.৫ শতাংশ হওয়া জরুরি হলেও কীভাবে সম্ভব, বাজেটে তা স্পষ্ট নয় বলেই মত তাঁর। আবার ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সীতারাম শর্মা বলছেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে নতুন লগ্নিকে উৎসাহিত করার মতো বাজেটে কার্যত নতুন কোনও পদক্ষেপ নেই। তাঁর কথায়, ‘উচ্চ আর্থিক বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ভোগ, বিনিয়োগ ও সঞ্চয় বৃদ্ধির মতো জাতীয় আয়ের মূল কাঠামোকে উৎসাহিত করার কোনও সার্বিক কৌশল বাজেটে নেই।’
অন্যদিকে, প্রবীণ শিল্পপতি আদি গোদরেজ স্পষ্টই বলেছেন, বাজেট বৃদ্ধির দিকে নজর রেখে তৈরি হয়নি। মহিন্দ্রা হলিডে’জ-এর চেয়ারম্যান অরুণ নন্দার দাবি, বাজেটে কর্মসংস্থানের দিশা নেই। প্রায় একই সুর সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়েরও। তাঁর প্রশ্ন মানুষ জানতে জানতে চায়, অর্থনীতি চাঙ্গা হবে? চাকরি তৈরি হবে? ঠিকমতো ফসলের দাম মিলবে? তাঁর মতে, বাজেটে সেগুলির স্পষ্ট দিশা মেলেনি। বেসরকারি লগ্নি নিয়েও খুব একটা নিশ্চিত নন দীপঙ্করবাবু। তিনি জানান, রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারতে ৪০০০ কোটি ডলারের বিদেশি লগ্নি এলেও ভারত থেকে বিদেশে লগ্নি হয়েছে প্রায় ১১৩০ কোটি ডলার। ফলে বাইরে লগ্নি চলে যাওয়া আটকানো জরুরি বলেই তাঁর মত।