শুক্রবার সংসদে যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বাজেট পেশ করছেন, একদিনের মাথায় সোনার দাম বেড়ে দাঁড়াল ৩৫ হাজার ৩৩০ টাকা। গয়নার জন্য ২২ ক্যারেট হলমার্কযুক্ত সোনার দাম পৌঁছল ৩৪ হাজার ২৫ টাকায়। একদিনের তফাতে কলকাতায় ১০ গ্রাম সোনার দাম বাড়ল প্রায় সাড়ে সাতশো টাকা। কিন্তু বাজেটে মরার উপর খাঁড়ার কোপ দিলেন অর্থমন্ত্রী। ঘোষণা করলেন, সোনার আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২.৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হল।
অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণায় প্রমাদ গুণলেন ব্যবসায়ীরা। টালমাটাল আন্তর্জাতিক বাজারের জেরে এমনিতেই সোনার দাম রেকর্ড গড়েছে। এর উপর সরকার আমদানি শুল্ক ২.৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তা যখন আরোপ করা হবে, তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হবে, তা ভেবেই শঙ্কিত তাঁরা। এর ফলে চোরাচালান বাড়বে জেনেও সরকার এই পথে হাঁটল কেন? প্রশ্ন ব্যবসায়ীদের।
আড়াই শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি গোটা দেশেই ঋণাত্মক প্রভাব ফেলবে, মনে করছে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল। এখানকার ভারত শাখার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোমসুন্দরম পি আর বলেন, এদেশে মানুষ সোনা কেনেন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে সেই উদ্যোগ যেমন থমকে যাবে, তেমনই কালোবাজারি বাড়বে। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের কর্তাদের কথায়, একদিকে যেমন স্মাগলিংয়ের বাড়বাড়ন্ত হবে, তেমনই দাম বাড়বে অনেকটা। এখানকার ভাইস চেয়ারম্যান এবং সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শঙ্কর সেন বলেন, শুধু সোনা নয়, রূপোতেও বাড়ছে আমদানি শুল্ক।
দু’কোটি মানুষ সোনা-রূপোর ব্যবসায় বেঁচে আছেন। সরকার সাড়ে আট কোটি টাকা রাজস্ব বাড়ানোর জন্য এত বড় একটা শিল্পকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেল। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি বাবলু দে’র কথায়, আমরা সরকারকে বছরের পর বছর বুঝিয়ে এসেছি, আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে কখনও আমদানিতে রাশ টানা যায় না। এতে বরং চোরাচালান বাড়ে। তাতে ইন্ধন দিতেই সরকার শুল্ক আরও বাড়াল কি না, সেটাই রহস্য।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমা আছে। দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবে সোনার চাহিদা কমবে। ফলে গোটা শিল্পেই দেশজুড়ে বিক্রি কমবে। কারিগরদের হাতের কাজ কমবে। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি পশ্চিমবঙ্গের। কারণ এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি কারিগর কাজ করেন স্বর্ণশিল্পে। অঞ্জলি জুয়েলার্সের ডিরেক্টর অনর্ঘ উত্তীয় চৌধুরীর কথায়, মানুষের কঠিন সময়ের নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করে সোনা। সরকারের শুল্ক বাড়ানো তাই মোটেই শিল্পের পক্ষে ভালো লক্ষণ নয়।