এনআরসির কোপে পড়ে নিজভূমে পরবাসী হয়ে আছেন আসামের বাঙালিরা। তালিকায় নাম না ওঠায় ইতিমধ্যেই সে রাজ্যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বহু বাংলাভাষী মানুষ। তবে পর এবার আসামে বাঙালিদের ভিটেমাটি নিয়েও শুরু হয়েছে টানাটানি। করা হচ্ছে নতুন ভূমি আইন। বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার রাজ্যের অন্যান্য সমস্যার সমাধানের বদলে ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিপাকে ফেলাটাই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। গোটা রাজ্য এখন বানভাসি। মানুষ মরছে জাপানি এনসেফেলাইটিসে। নিজেদের ব্যর্থতা লুকোতেই এখন খিলঞ্জিয়া(ভূমিপুত্র)-র মন জয়ে ব্যস্ত বিজেপি সরকার। এমনই অভিযোগ বিরোধীদের।
প্রসঙ্গত, আসামে বছর দুয়েক আগেই গড়া হয়েছিল ভূমিপুত্রদের জমির অধিকার সুরক্ষা ও নতুন ভূমি আইন প্রণয়নে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি। যার চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ভারতের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হরিশঙ্কর ব্রহ্মকে। ৬ সদস্যের কমিটিতে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস রোহিণীকুমার বড়ুয়া, আইনজীবী অনিল ভট্টাচার্য, বর্তমান অ্যাডভোকেট জেনারেল রমেশ বরপাত্র গোঁহাই, ইতিহাসবিদ শ্রীকুমার দহতিয়া ও সমাজসেবী হিসেবে কমিটিতে স্থান হয়েছিল একমাত্র বাঙালি অজয় দত্তের।
প্রায় গোটা রাজ্য ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন কমিটির সদস্যরা। তখনই তাঁদের নজরে আসে আসামে জমি নিয়ে বড়সড় কেলেঙ্কারি। প্রোমোটার, মাফিয়া আর নেতাদের হাতে বদলে যাচ্ছে জমির চরিত্র। চা শ্রমিক থেকে আদিবাসী, সকলেই বঞ্চিতদের দলে। শুধু তাই নয়, এক রাজ্যে ৩ ধরণের জমি আইন চালু। কোথাও জমির অভিভাবক মৌজাদার। কোথাএ আবার সেরেস্তাদার। এ বিষয়ে এক নীতি করার কথাই বলা হয়েছিল কমিটি গঠনের সময়। কিন্তু রিপোর্ট তৈরির সময়ই বোঝা যায়, সরকারের আসল উদ্দেশ্য খিলঞ্জিয়াদের মন জয়। ফলে কমিটিতে দেখা দেয় মতবিরোধ। দু’রকম রিপোর্ট জমা পড়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেয়ালের কাছে।
এক দিকে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দুই সদস্য, অন্যদিকে চার সদস্য। সংখ্যাগরিষ্ঠরা চেষ্টা করেন ভাষিক ও সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার। বেশ কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারের নামে অভিযোগও তোলেন। বলার চেষ্টা করেন, শাসক দলের ছত্রছায়ায় ব্যাপক কেলেঙ্কারি চলছে। চা-শ্রমিকরা হারাতে চলেছেন জমির অধিকার। সেখাএ থাবা বসেছে প্রোমোটারদের৷ কিন্তু সেই অভিযোগ নাকি শুনতেই নারাজ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী। যার ফলে অজয় দত্তের অভিযোগ, ‘আমাদের আপত্তি শোনাই হয়নি। খিলঞ্জিয়াদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে বিজেপি সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।’