কাল সংসদে দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বর্ষের বাজেট পেশ হয়েছে। যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম বাড়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষের। জ্বালানি থেকে সোনা, বই থেকে এসি- দাম বেড়েছে প্রায় অনেককিছুরই। তবে দু’হাত ভরে ভোট দেওয়ার পরও কেন্দ্রীয় বাজেটে ধুঁকতে থাকা চা-শিল্প নিয়ে একটি কথাও না থাকায়, হতাশ উত্তরবঙ্গের চা-বলয়। তাঁরা মনে করছে, তাঁদের ভোট অপাত্রে দান করা হয়েছে।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে ডুয়ার্সের বন্ধ চা-বাগান পরিদর্শনে এসে চায়ের সার্বিক সমস্যা সমাধানে একরাশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্মলা সীতারামন। তিনি তখন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। শুক্রবার দেশের প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী হিসেবে সেই তিনিই যখন বাজেট পেশ করতে শুরু করেন, তখন আশায় বুক বেঁধেছিল উত্তরের আপামর চা শিল্পমহল। কিন্তু রাজ্যের চা-শিল্প নিয়ে কোনও বরাদ্দ তো দূরের কথা, এ নিয়ে নির্মলা সীতারামন একটিও শব্দ খরচ না করায় প্রত্যাশার ফানুসটা চুপসে যায় এক পলকে।
আলিপুরদুয়ার লোকসভার সাংসদ জন বারলা বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে উত্তরবঙ্গের চা-শিল্পের নানা সমস্যা তুলে ধরে লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। মন্ত্রীর আশ্বাস পেলেও বাজেট পেশের পর হতাশ জন বারলা অবশ্য সরাসরি মন্তব্য এড়িয়েছেন। চা-শ্রমিকরাই আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের নির্ণায়ক শক্তি। তাঁদের সিংহ ভাগ ভোট পেয়ে তিনটি লোকসভা আসনেই বিপুল ভোটে জয়ী হন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা। তাই বাজেট নিয়ে চা-মহল্লায় প্রত্যাশা ছিল প্রচুর।
এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তৃণমূল চা শ্রমিক নেতা প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “নির্বাচনের আগেই আমরা বলেছিলাম, চা-বাগানের সমস্যা নিয়ে চরম ভাঁওতাবাজি করছে বিজেপি। এই বাজেটের পরেই মোদী সরকারের মিথ্যের মুখোশটা প্রকাশ্যে চলে এল। আমরা তো আগেই বলেছিলাম কেন্দ্রের বিজেপি সরকার চা-শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে ভাবছে না। আজ তা মিলে গেল। এর ফলে চা-শিল্পে ভয়ঙ্কর কালো দিন আসাটা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।’
ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “আমরা আশাহত। ধুঁকতে থাকা চা-শিল্প নিয়ে এই বাজেটে একটি কথাও উচ্চারণ করা হয়নি। আশা করেছিলাম, রপ্তানি শুল্ক হ্রাস নিয়ে নতুন সম্ভাবনার কথা শুনতে পাব। তাতেও নিরাশ হতে হয়েছে। এর পর চা-শিল্প বাঁচানোর উপায় নেই।”
ডিবিআইটির ডুয়ার্স শাখার সচিব সুমন্ত গুহঠাকুরতা বলেন, “বাজেটে উত্তরবঙ্গের চা-শিল্প নিয়ে নতুন কোনও দিশা তো দেওয়াই হয়নি। বরং ব্যাঙ্ক লেনদেনের ক্ষেত্রে এক কোটি টাকার বেশি হয়ে গেলেই অতিরিক্ত টাকা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। সামনেই পুজো, তখন বোনাস দেওয়ার জন্য এক-একটি চা বাগানকে ওই টাকা মেটাতে গিয়ে অতিরিক্ত বোঝা টানতে হবে। যা চা-শিল্পের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে বেহাল করে দেবে।”
উত্তরবঙ্গের চা-বলয়ের সঙ্গে জড়িত থাকা এই সকল মানুষের কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে মোদী সরকারের এইবাজেট উত্তরবঙ্গের চা-শিল্পকে সব দিক থেকে হতাশ করেছে।