এনসেফেলাইটিস শব্দের সঠিক শব্দ করলে দাঁড়ায়, এনসেফেলন কথার অর্থ মস্তিষ্ক। আর আইটিস কথার অর্থ প্রদাহ (ইনফেকশন)। এই দু’টি শব্দকে একত্রে করে এনসেফালাইটিস শব্দটি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ এনসেফালাইটিসের প্রকৃত অর্থ হল মস্তিষ্কের প্রদাহ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অটোইমিউন (শরীর নিজেই নিজের বিরুদ্ধে লড়ছে) ইত্যাদি নানা কারণে মানুষ এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। আবার অনেকসময় এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। রোগের নেপথ্য কারণ খুঁজে না পাওয়া রোগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বিগত দশকে কানাডায় হওয়া একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, প্রায় ৬০ শতাংশ এনসেফালাইটিস আক্রান্তের রোগের নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করা যায় না। তবে গত কয়েক বছরে চিকিৎসাব্যবস্থা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। এখন অনেক ধরনের অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় সহজ হয়েছে।
ইতিমধ্যেই বিহারে এবং আসামে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এনসেফেলাইটিসের আতঙ্ক। প্রায় একশোর বেশি শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে নানা রকম তথ্য উঠে আসলেও, এখনও বিহারের এনসেফেলাইটিসের নেপথ্য কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কারণ খুঁজে বের করার সবরকম চেষ্টাই চলছে। সেইমতো কাজে লেগে পড়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
রোগ লক্ষণঃ
এই রোগের অন্যতম লক্ষণ হল জ্বর। এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীরই জ্বর থাকে। একটা বড় অংশের রোগীর খিঁচুনি হতে দেখা যায়।
অনেকসময় কিছু নিউরোলজিক্যাল লক্ষণও দেখা দিতে পারে। যেমন— হাত কাজ করছে না, পা কাজ করছে না, ঘাড় তোলা সম্ভব হচ্ছে না ইত্যাদি। এগুলিকে বিজ্ঞানসম্মত ভাষায় ফোকাল নিউরোলজিক্যাল সাইন বলে।
প্রায় ৫০ শতাংশ রোগীর সচেতনতা (কনশাসনেস) অনেকটা কমে যায়। অনেক সময় রোগীর কোনও নার্ভ প্যারালিসিস হতে পারে।
চিকিৎসা কী?
এই রোগের নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। আক্রান্তকে মূলত সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট দিতে হয়। রোগীর হৃদ্গতি, রক্তচাপ, মাথার ভিতরের প্রেশার, ফ্লুইড, শরীরের ইলেকট্রোলাইটস ব্যালান্স ইত্যাদি নজরে রাখতে হয়। পাশাপাশি লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা যেমন জ্বর হলে জ্বরের চিকিৎসা, খিঁচুনি হলে তার চিকিৎসা ইত্যাদি করে যেতে হবে। রোগী কোমায় চলে গিয়ে থাকলে সেই মতো চিকিৎসা করা দরকার।
আবার বেশকিছু ধরনের এনসেফেলাইটিসের চিকিৎসা রয়েছে। হারপিক্স সিমপ্লেক্স ভাইরাস থেকে হওয়া এনসেফেলাইটিসের আলাদা করে চিকিৎসা রয়েছে। আবার মাইক্রোপ্লাজমা এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হলে অ্যাজিথ্রোমাইসিন জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। অটোইমিউন এনসেফেলইটিসের রোগীকে স্টেরয়েডের মাধ্যমে চিকিৎসা করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ভারতে এখন স্ক্রাব টাইফাস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। অনেকসময় এই রোগে আক্রান্তকেও এনসেফেলাইটিসের মতো লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেখা যায় রোগীর জ্বর, সচেতনতার অভাব রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বেশিরভাগ রোগীরই গায়ে র্যাশ বেরতে দেখা যায়। তবে আশার বিষয় হল, এই রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু সঠিক রোগ নির্ণয়ের। রোগ প্রতিরোধে জাপানিজ এনসেফেলাইটিসের টিকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কোনও বয়সের মানুষ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে এই টিকা নিতে পারেন।