চলতি বছরের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি দেশের শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, অরণ্যে বসবাসের জন্য রাজ্য সরকারগুলির কাছে করা আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরও, যাঁরা অরণ্যেই বসবাস করছেন, তাঁদের অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে। ওই রায়কে সভ্যতা বিরোধী বলে অভিযোগ জানিয়ে তার পুনর্বিবেচনা দাবি করেন পরিবেশবিদরা। আগামী ২৪ শে জুলাই, অরণ্যের অধিকার আইন সংক্রান্ত ওই গুরুত্বপূর্ণ মামলার মহাগুরুত্বপূর্ণ শুনানি।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী সারা দেশে অরণ্যে বসবাসকারীদের সংখ্যা প্রায় ২৩ লক্ষ। তাঁদের সকলকেই উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারপরই ওই রায়কে সভ্যতা বিরোধী বলে অভিযোগ জানিয়ে তার পুনর্বিবেচনা দাবি করেন পরিবেশবিদরা। কিন্তু দেখা যায়, মামলার শুনানিতে হাজিরই ছিলেন না কেন্দ্রের আইনজীবী। ফলে রাষ্ট্রের তরফের সওয়ালও করা যায়নি। মোদী সরকারের এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে।
কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকারগুলোকে আদিবাসী ও অরণ্যবাসীদের প্রতি সহানুভূতি দিয়ে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন রাহুল গান্ধী। পথে নামেন অন্যান্য বাম, মানবাধিকার ও সমাজকর্মীরা। তারপরই বাধ্য হয়ে অবস্থান বদলে আদালতে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে কেন্দ্র। পরবর্তী শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলিকে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ২৪ শে জুলাই রাজ্যগুলো জানাবে, কোন যুক্তিতে আদিবাসী ও অরণ্যবাসীদের আবেদন খারিজ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অরণ্যের অধিকার আইনকে বাতিল করার আবেদন জানিয়ে বন দফতরের অফিসারদের একাংশ ২০০৮ সালে মামলাটি করেছিলেন। বনাধিকার আইনটি পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়ার আবেদন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করলেও, বনের জমিতে পাট্টার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়া আদিবাসী এবং অরণ্যবাসীদের অবিলম্বে বনভূমি থেকে উচ্ছেদ করার রায় দেয়। এই আদেশও কি কার্যত অরণ্যের অধিকার আইনকেই খারিজ করা নয়? এমনটাই প্রশ্ন পরিবেশবিদ ও আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের।
এই প্রেক্ষিতেই সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর খবর। আর তা হল, ইন্ডিয়ান ফরেস্ট অ্যাক্টে বদল আনার পথে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে চলেছে মোদী সরকার। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, ফরেস্ট অ্যাক্টে সংশোধন এনে এই আইনকে ব্রিটিশ আমলের চেয়েও ভয়ঙ্কর করে তোলার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। এই সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রকাশ্যে এসেছে। আর তাতেই প্রমাদ গুনছেন লক্ষ লক্ষ আদিবাসী এবং অরণ্যবাসী।
সেই খসড়া দেখে পরিবেশবিদ এবং আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে লড়াই করা মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, সংশোধিত ফরেস্ট অ্যাক্টের মাধ্যমে নিজে অভিযোগ এনে, নিজেই তার বিচার করে, নিজের হাতে শাস্তি দেওয়া এবং প্রয়োজনে কোনওরকম জবাবদিহির পরোয়া না করে সরাসরি গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হবে ফরেস্ট অফিসারদের হাতে। দেশের অন্য কোনও বিভাগের অফিসারদের এমন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া নেই। এর ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য।
তবে আগামী ২৪ তারিখ লক্ষ লক্ষ আদিবাসী এবং অরণ্যবাসীকে উচ্ছেদের রায় কি বহাল রাখবে সুপ্রিম কোর্ট? এখন এই প্রশ্নেই এখন আটকে যাবতীয় জল্পনা।