মোদী সরকারের প্রথম ইনিংসে বহুবারই বিষয়টি সংসদে উত্থাপিত হয়েছিল। প্রতিবারই এড়িয়ে গেছে কেন্দ্র। সেই ২০১৬-র অক্টোবরে রাজ্যের নাম বদল করে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব গৃহীত হয় বিধানসভায়। তারপর পেরিয়ে গেছে আড়াই বছর। দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে মোদী সরকার। কিন্তু আজও সেই একই তিমিরে রয়ে গেল রাজ্যবাসী। আজও বাংলা ও বাঙালির ভাবাবেগের দাম দিল না কেন্দ্র। এ নিয়েই এবার সরব রাজ্যের তরুণ বাঙালি সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে বিধানসভায় সর্বদলমত নির্বিশেষে রাজ্যের ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নাম বদলে নতুন নাম রাখার বিষয়ে সম্মতি জানায়। বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ৩টি ভাষায় ৩টি নাম বাছা হয়- বঙ্গ, বেঙ্গল ও বঙ্গাল। কিন্তু সেবার রাজ্যের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে কেন্দ্র অজুহাত দেয়, পৃথক পৃথক নাম নয়। ৩টি ভাষাতেই এক নাম হতে হবে। এরপরই মমতার নেতৃত্বে রাজ্য সরকার রাজ্যের নাম ৩ ভাষাতেই ‘বাংলা’ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে। কিন্তু তারপর আড়াই বছর ধরে বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনাধীন থাকার পরেও ওই প্রস্তাব নিয়ে গড়িমসি করছে তারা।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সংসদের জিরো আওয়ারে সেই প্রসঙ্গ ফের তুলেছিলেন নির্দল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি কতদূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে লিখিতভাবে জানতেও চান তিনি। তাঁর প্রশ্ন ছিল, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার যে প্রস্তাব রাজ্য বিধানসভা থেকে এসেছে, তাতে কেন্দ্রীয় সরকার কি অনুমোদন দিয়েছে? জবাব হ্যাঁ হলে সবিস্তারে জানান। আর যদি জবাব না হয়, তাহলে কী কারণে তা অনুমোদন করা হয়নি? এর উত্তরে বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, ‘এখনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কোনও রাজ্যের নাম পরিবর্তন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হয়।’ তিনি এ-ও জানান, বিষয়টি নাকি উত্থাপন করাই হয়নি!
এরপরই এর পাল্টা হিসেবে ঋতব্রত কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাংবিধান সংশোধনী তো স্বাভাবিক। এ জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। কিন্তু আড়াই বছর ধরে বিষয়টি আটকে রয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ২০১৬ সালে রাজ্য সরকার বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গ নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব পাশ করিয়েছিল। তাহলে আড়াই বছরেও কেন সংবিধান সংশোধন হল না? এরপরই তাঁর প্রশ্ন, উড়িষ্যার নাম বদলে তো ওড়িশা করা হল। সেক্ষেত্রে কীভাবে হল? আর বাংলার ক্ষেত্রেই বা সমস্যা কেন? তিনি এ প্রশ্নও তোলেন যে, ইস্টবেঙ্গল যখন ছিল, তখন ওয়েস্ট বেঙ্গলের মানে ছিল। কিন্তু এখন তো ইস্টবেঙ্গল বলে কিছু নেই। তাহলে ওয়েস্ট বেঙ্গল কেন থাকবে? এর তো কোনও যুক্তিই নেই।
এর সঙ্গেই ঋতব্রত যোগ করেন, সরকারের বক্তব্য, রাজ্যের নাম বাংলা করা হলে তা নাকি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে গুলিয়ে যাবে। কিন্তু পাকিস্তানে যেমন পাঞ্জাব প্রদেশ আছে, তেমম ভারতেও পাঞ্জাব বলে একটি রাজ্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না হলে এক্ষেত্রে হবে কেন? বাংলার পক্ষে তাঁর অকাট্য যুক্তি, নরেন্দ্র মোদী বারবারই এত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা বলছেন। সেখানে একটা রাজ্য, যেখানে বাংলা ও বাঙালির একটা ভাবাবেগ রয়েছে। সেই বাংলার পক্ষে সরকার আগেই প্রস্তাব পাশ করিয়েছে। সেক্ষেত্রে ওটা বাস্তবায়িত হলে তো যুক্তিরাষ্ট্রীয় কাঠামোকেই সম্মান জানান হয়। তাও কেন পিছিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র সরকার? ঋতব্রতর অভিযোগ, ‘আসলে বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থে মোদী সরকার রাজ্য বিধানসভার সর্বসম্মত প্রস্তাব আটকে রেখে গোটা বাংলা ও বাংলার মনুষকে অপমান করছে।’