রাজ্যের প্রস্তাবিত ‘বাংলা’ নামে সায় দিল না কেন্দ্রীয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব করা এই নামে আপত্তি রয়েছে মোদী সরকারের। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, রাজ্যের নাম পরিবর্তনের জন্য দরকার সংবিধান সংশোধন। তাই ফের ‘বাংলা’ নাম রাখতে রাজনৈতিক গড়িমসির শিকার হল রাজ্য।
এই ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রে খবর, অসন্তোষ জানিয়ে ইতিমধ্যেই দিল্লীতে ফোন করেছেন তিনি। রাজ্য সরকারের তরফে ফের কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানা যাচ্ছে।
২০১৬-র অক্টোবরে রাজ্যের নাম বদল করার প্রস্তাব গৃহীত হয় বিধানসভায়। সর্বদলমত নির্বিশেষে রাজ্যের ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নাম বদলে নতুন নাম রাখার বিষয়ে সম্মতি জানায়। বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ৩টি ভাষায় ৩টি নাম বাছা হয়- বঙ্গ, বেঙ্গল ও বঙ্গাল। কিন্তু রাজ্যের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় কেন্দ্র। পৃথক পৃথক নাম নয়। ৩টি ভাষাতেই এক নাম হতে হবে বলে রাজ্যকে জানায় কেন্দ্র। এরপরই রাজ্য সরকার রাজ্যের নাম ৩ ভাষাতেই ‘বাংলা’ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বসম্মতির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে নাম বদলের সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে পাঠায় রাজ্য। কিন্তু রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করার বিষয়ে সিলমোহর দিল না কেন্দ্র। এই নিয়ে ৩ বার রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব ফেরাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
উল্লেখ্য, সংসদের জিরো আওয়ারে রাজ্যের নাম বদলের দাবি উত্থাপন করেন নির্দল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। একইসঙ্গে রাজ্যের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি কতদূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে সম্প্রতি সংসদে লিখিতভাবে জানতেও চান ঋতব্রত। তার জবাবে লিখিত ভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়ে দিয়েছেন, বিষয়টি উত্থাপনই হয়নি। তাঁর বক্তব্য, নাম পরিবর্তনের জন্য সংসদে বিল পেশ করে সংবিধান সংশোধনী আনতে হয়। কিন্তু সেটা যে হেতু করা হয়নি, তাই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি সেই বিল পেশের উপরেই নির্ভর করছে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, সংবিধান সংশোধন করতে পারে কেন্দ্র সরকার, রাজ্য নয়। ঠিক যেভাবে ‘উড়িষ্যা’র নাম বদলে ‘ওড়িশা’ করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের সরকারের যুক্তি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুক্তি, রাজ্যের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। সেখানেও নামে ‘বাংলা’ রয়েছে। ফলে তা সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রের এই যুক্তিকেও আমল দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, পাকিস্তানেও ‘পঞ্জাব’ নামে একটি প্রভিন্স রয়েছে। আবার এদিকে ভারতেও ‘পঞ্জাব’ নামে রাজ্য রয়েছে। তাতে যদি কোনও সমস্যা না হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অযৌক্তিক। কারণ পড়শি দেশের সম্পূর্ণ নাম বাংলাদেশ। তাঁদের আরও প্রশ্ন, ‘ইস্টবেঙ্গল’ নামটি শুধুই রয়েছে খাতায়-কলমে আর ফুটবল ক্লাবের নামে। তাহলে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামটি চালিয়ে যাবার কি যুক্তি? বিপুল ভোটে দ্বিতীয়বার জিতে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় দেশ চালানোর কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু রাজ্যবাসীর আবেগ জড়িয়ে যে নামের সঙ্গে তাকে গুরুত্ব না দিয়ে, সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো কতটা মানছেন মোদী? এমন প্রশ্নও তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করেছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘বাংলা নাম খারিজের সিদ্ধান্ত ঠিক হল না’। আরেক সাহিত্যিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি সরাসরি অভিযোগ তুলে বলেন, ‘বাংলাকে বঞ্চনা করল কেন্দ্রীয় সরকার’।
উল্লেখ্য, প্রসঙ্গত, ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটি ইংরাজিতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রে পরে সুযোগ পায় রাজ্য। নাম বদলে বাংলা হলে, সেক্ষেত্রে ইংরাজিতে নাম শুরু হবে ‘B’ দিয়ে। ফলে সরকারি অনেক ক্ষেত্রে রাজ্য আগে সুবিধা পাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।