কান পাতলে এ কথা হামেশাই শোনা যায় যে, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে, আর মেসি বার্সেলোনায়।’ এবার সুযোগ ছিল তাঁর ‘শত্তুর’দের মুখে ছাই দিয়ে কিছু একটা করে দেখানোর। কিন্তু কোথায় কী! আবারও সেই সব ‘ভামোশ’কে ‘খামোশ’ করে দিয়ে দেশের জার্সি গায়ে ট্রফি না জেতার বদনাম নিয়েই মাঠ ছাড়তে হল লিওনেল মেসিকে। আর আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে গেল ব্রাজিল।
প্রসঙ্গত, ক্লাবের ফর্ম দেশের জার্সিতে দেখাতে পারেন না— লিওনেল মেসির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সর্বজনবিদিত। বছর কয়েক আগে কোপা আমেরিকা ফাইনাল হারের পর মেসির দাদুও তাঁকে ‘অলস’ বলতে ছাড়েননি। এমনকী আর্জেন্তিনীয় তারকা তথা ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনাও হামেশাই বলে থাকেন, ক্লাবে যেই ফুটবলটা খেলেন সেটা দেশের হয়ে খেলেন না মেসি। এমনকী বছর চারেক আগে তিনি প্রকাশ্যেই এ কথা বলেন যে, ‘আর্জেন্টিনায় বিশ্বের সেরা ফুটবলার আছে। রিয়েল সোসিয়েদাদের বিরুদ্ধে মেসি চার গোল করতে পারে, কিন্তু দেশের হয়ে একটা বলও ঠিক করে ধরতে পারে না।’
শুধু তাই নয়। তাঁর স্বদেশীয়কে নিয়ে বিরক্ত মারাদোনা এ প্রশ্নও তুলেছিলেন যে, ‘মেসিকে বড্ড বেশি আরামে রাখা হয়। মনে রাখতে হবে, ও বাকিদের মতোই। ওকে আলাদা করে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে কেন?’ আবার বছর কয়েক আগে ফ্রান্সে এক প্রদর্শনী ম্যাচে খেলার পর পেলের সঙ্গে আড্ডায় মেসিকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন মারাদোনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের মতে, পেলে সেসময় মারাদোনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মেসিকে মানুষ হিসেবে তোমার কি ভালো মনে হয়?’ প্রশ্নের উত্তরে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মারাদোনা বলেছিলেন, ‘আরে, ওর তো ভালো লিডার হওয়ার মতো মশলাই নেই। ওর কোনও ব্যক্তিত্বই নেই। নেতা হিসেবে ওকে ভাবা যায় না।’
সত্যিই যে মেসিকে দলনেতা হিসেবে ভাবা যায় না, বারবারই তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন তিনি নিজেই। সে দিক থেকে ভুল কিছু বলেননি ফুটবলের রাজপুত্র। এমনকী এ-ও শোনা যায় যে ম্যাচের আগে মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে বারবারই টয়লেটে ছোটেন তিনি। যা কখনই অধিনায়কচিত নয়। আর আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে কে বেশি সফল এ বিচার করতে গেলে তো মারাদোনার কাছে কয়েকশো গোল খাবেন মেসি। দেশের হয়ে ১৯৮৬-তে বিশ্বকাপ জিতেছেন মারাদোনা। সে বছর সোনার বলও পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর বিশ্বকাপে দেশকে রানার্স করিয়েছিলেন। দু’বার লাতিন আমেরিকার সেরা ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি হয়েছেন ফিফার বিচারে শতাব্দীর সেরা ফুটবলার।
আর মেসি? টেনেটুনে ২০১৪-য় দেশকে রানার আপ করিয়েছেন তিনি। অবশ্য জিতেছিলেন সোনার বলও। তবে ওই পর্যন্তই। তারপর আরও একটা বিশ্বকাপ চলে গেল, কিন্তু তবুও দেশকে কাপ দিতে পারলেন না তিনি। যেখানে এখনও লা লিগায় খেলতে নামলেই মেসির খেলায় ঝরে পড়ে ‘ঐশ্বরিক ছটা’, বার্সাকে একের পর এক কাপ উপহার দেন তিনি, সেখানে ‘ভুল প্রেমে’ যে আর কতগুলি বসন্ত কেটে যাবে আর্জেন্টিনাবাসীর, তার উত্তর সময়ই দেবে। আপাতত সকলের নজর এক দিকেই, ফের কবে দেশের জার্সিকে বিদায় জানাতে অবসরের কথা ঘোষণা করেন মেসি। সামনের মাস থেকেই তো লা লিগা শুরু। তাই এবার ক্যাম্প ন্যু’তেই মনোনিবেশ করতে হবে যে!