বিশ্বকাপের রবিবাসরীয় ম্যাচে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের রুদ্ধশ্বাস লড়াই দেখার জন্যে মুখিয়ে ছিল ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু ম্যাচ শেষে ভারতের লজ্জার হারে ক্ষোভে ফুঁসছেন ভারতীয় সমর্থকেরা। ভারত কী জন্য ম্যাচ হারল? দুর্দান্ত ইংরেজ বাহিনীর পরাক্রমে, না নিজেদের দোষে? খুঁজতে গেলে উঠে আসছে বেশ কিছু কারণ।
টসে জিতে ইংল্যান্ড ব্যাটিং নেওয়ার ফলে বাড়তি অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যান মর্গ্যানরা। জনি বেয়ারস্টো এবং জেসন রয় এতটাই নির্মম ছিলেন যে, ২০ ওভারেই ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ১৪৫। অন্য দিনের মতো এ দিন কিন্তু শুরুতেই ওপেনারদের ফিরিয়ে বুমরা-শামিরা ভারতকে অ্যাডভান্টেজ দিতে পারেনি। দুই পেসার উইকেট না পাওয়ায় প্রথমেই বাড়তে অক্সিজেন পেয়ে যায় ইংল্যান্ড।
ক্রিকেট দেবতা আজ সুপ্রসন্ন ছিল ইংল্যান্ডের প্রতি। ম্যাচের গোড়াতেই হার্দিক পাণ্ড্যর বল জেসন রয়ের গ্লাভসে ছুঁয়ে ধোনির হাতে জমা পড়ে। আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ না নিয়ে ভুল করেন বিরাট। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল জেসনের গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছে। জীবন ফিরে পেয়ে ৬৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন ইংল্যান্ডের এই ডানহাতি ওপেনার। ভাগ্য ভাল না থাকলে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়া জনি বেয়ারস্টো হয়ত ড্রেসিং রুমে ফিরে যেতেন বহু আগেই। একাধিকবার ইনসাইড এজ উইকেটের কান ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
ম্যাচের শুরু থেকেই আঘাত হানতে ব্যর্থ হন শামি এবং বুমরা। ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেট যখন পড়ে ততক্ষণে স্কোর দেড়শো পেরিয়ে গিয়েছে। ছন্দে থাকা জো রুট,বেন স্টোকসদের তাই কোনও অসুবিধাই হয়নি। ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস যে ইনিংসের শেষ ওভারগুলোয় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন, তা জানা ছিলই। তবু তাঁকে আটকাতে তেমন কোনও পরিকল্পনাই চোখে পড়ল না।
অন্যদিকে ভারত বড় রান তাড়া করে এর আগে বহু ম্যাচ জিতেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রয়োজন একটি ভাল ওপেনিংয়ের। লোকেশ রাহুল ৯ বলে শূন্য রান করে ফিরে যেতে প্রথমেই কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। বিরাট-রোহিত ম্যাচের হাল ধরেন। রোহিতের ১০৯ বলে ১০২ রান এবং কোহালির ৭৬ বলে ৬৬ রান ভারতকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও ছন্দপতন হয় দুই ব্যাটসম্যান ফিরে যেতেই। চলতি বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া অনভিজ্ঞ ঋষভ পন্থকে অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন ক্রিস ওকস। তবুও হার্দিক পাণ্ড্য ৩৩ বলে ৪৫ রানের মরিয়া চেষ্টা করেন।
ঋষভ পন্থ ফিরে যেতে মাঠে নামেন ধোনি। গ্যালারি জুড়ে তখন ধোনি ধোনি রব। ক্রিজে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফিনিশার। কিন্তু প্রথম থেকেই সিঙ্গলস নিতে থাকেন ধোনি। ক্রমেই বল কমে রান বাড়তে থাকে। তাতেও হেলদোল ছিল না ক্যাপ্টেন কুলের। গ্যালারি থেকে ধোনির উদ্দেশে ভেসে আসে টিটকিরি। ধোনি যতক্ষণে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বল মাঠের বাইরে পাঠালেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। স্কোরবোর্ডে তখন প্রয়োজন ৩ বলে ৩৭ রান। ক্রিজের অপরপ্রান্তে থাকা কেদারের জঘন্য ব্যাটিংয়েও ধরা পড়েনি কোনও লড়াকু মনোভাব।
নিন্দার ঝড় উঠেছে ধোনির এই গা ছাড়া ব্যাটিংয়ের। কেদারের পরিবর্তে দলে জাদেজাকে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বহু প্রাক্তন ক্রিকেটার। সবমিলিয়ে ভারতের এই হতশ্রী পারফরম্যান্সে হতবাক গোটা বিশ্ব।