এজবাস্টনের পাটা উইকেটে এদিন ম্যাচ শুরু হওয়ার পর থেকেই অনেক স্বচ্ছন্দ লাগছিল ইংল্যান্ড ওপেনার জেসন রয়কে। কিন্তু আগের ২ ম্যাচে খারাপ ফর্ম থাকায় বেয়ারস্টো কিছুটা ধীরে খেলছিলেন। পাওয়ার প্লে তে এসে শামি ও বুমরাহ ভালোই বল করছিলেন। এই সময় ভাগ্যেরও সঙ্গ পান বেয়ারস্টো। মহম্মদ শামির দুটো বল ব্যাটের ইনসাইড এজে লেগে বাউন্ডারি পার করে।
হাত কিছুটা সেট হয়ে যাওয়ায় আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেন দুই ব্যাটসম্যানই। বিশেষ করে দুই স্পিনার চাহাল-কুলদীপ ও তৃতীয় সিমার হার্দিক পান্ড্যকে টার্গেট করেন তাঁরা। কুল-চা জুটিকে এদিন তাঁরা প্রায় ক্লাব স্তরের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিলেন। অবশ্য এর মধ্যেই ফের ভাগ্যের সঙ্গ মেলে জেসন রয়ের। হার্দিকের বল রয়ের গ্লাভসে লেগে ধোনির গ্লাভসে জমা পড়ে। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউও নেয়নি ভারত। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় আউট ছিল।
তারপর থেকে তো রানের গতি পিক আপ গিয়ারে চলে যায়। দুই ব্যাটসম্যানই নিজেদের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল বেয়ারস্টোকে। জনি বেয়ারস্টো ও জেসন রয় ১৬০ রানের পার্টনারশিপ করার পর জাদেজার দুরন্ত ক্যাচে প্রথম উইকেট পায় ভারত। কুলদীপের বলে ছয় মারতে গিয়েছিলেন রয়। কিন্তু লং অনে দৌড়ে এসে দুরন্ত ক্যাচ ধরেন জাদেজা। তারপরেও বেয়ারস্টো নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে থাকেন। ৯০ বলে নিজের সেঞ্চুরি করেন বেয়ারস্টো। অন্যদিকে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছিলেন রুট।
এরপরে বাধ্য হয়েই নিজের প্রধান দুই বোলার শামি ও বুমরাহর কাছেই ফিরে যান কোহলি। সেই শামিই ফের ভাঙলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে। প্রথমে ১১১ রানের মাথায় শামিকে কাট মারতে গিয়ে পন্থের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বেয়ারস্টো। তারপরেই ইংল্যান্ডকে আরও বড় ধাক্কা দেন শামি। তাঁর নিখুঁত বাউন্সারে পুল মারতে গিয়ে ফাইন লেগে কেদার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। এই সময়ে রানের গতি অনেক কমে যায়। একটা সময় টানা ১০ ওভারে একটাও চার-ছয় মারতে পারেনি ইংল্যান্ড। তারপর পার্টনারশিপ গড়েন জো রুট ও বেন স্টোকস। তাঁদের পার্টনারশিপে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল ইংল্যান্ডের ইনিংস। আর ঠিক তখনই ফের জ্বলে উঠলেন শামি। ফিরে এসেই ৪৪ রানের মাথায় রুটকে আউট করেন তিনি।
এর মধ্যেই বেন স্টোকস চলতি বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। যথেষ্ট সাবলীল দেখাচ্ছিল তাঁকে। অন্যদিকে বাটলারও মারা শুরু করেন। ৪৭তম ওভারে শামিকে মেরে ১৪ রান নেন বাটলার। কিন্তু শেষ বলে বাটলারকে কট অ্যান্ড বল করেন শামি। ৪৯ তম ওভারের প্রথম বলেই ফের উইকেট নেন তিনি। ওকস কে আউট করে ফিরিয়ে দেন ড্রেসিংরুমে। এদিন তিনি একাই নিলেন ৫ টি উইকেট। যার ফলে ৩ ম্যাচ খেলে তাঁর মোট উইকেটের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ টি। একদম শেষ ওভারে দেখা গেল বুমরাহ কামাল। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা স্টোকসকে ৭৯ রানের মাথায় আউট করেন বুমরাহ। শেষ ওভারে মাত্র তিন রান দেন তিনি। বাটলার ওকস আউট হওয়ায় অন্তত ১৫-২০ রান কম হয় ইংল্যান্ডের। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৩৭ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই শূণ্য রানে রাহুলের উইকেট হারায় ভারত। তারপর পার্টনারশিপ গড়েন কোহলি ও রোহিত। প্রথমে কিছুটা ধীরে খেলে তারপর হাত সেট হলে রানের গতি বাড়ান দুজনে। দুজনেই হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ গড়েন তাঁরা। দেখে মনে হচ্ছিল দুজনে থাকলে ম্যাচ জিতে যাবে ভারত। কিন্তু তখনই ৬৬ করে আউট হন কোহলি। লাগাতার পাঁচ ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করলেও সেঞ্চুরি এল না কোহলির।
তারপর রোহিতের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়েন ঋষভ পন্থ। রোহিত এ দিন বিশ্বকাপে নিজের তিন নম্বর সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু সেঞ্চুরি করেই আউট হয়ে যান রোহিত। পন্থ ও হার্দিক দ্রুত রান তুলছিলেন। জরুরি রান রেট বাড়লেও রান আসছিল। আর তখনই পন্থকে দুরন্ত ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফেরান ওকস। হার্দিকও ঝোড়ো ৪৫ করে আউট হয়ে যান। তারপরেই জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় ভারতের। শেষ পর্যন্ত ধোনি ও কেদার চেষ্টা করলেও জয় আসেনি। ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩০৬ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস। ৩১ রানে হারে ভারত। এ দিনের হারের ফলে বিশ্বকাপে এই প্রথম হারের মুখ দেখল ভারত। সেইসঙ্গে ইংল্যান্ডের জয়ে চাপ বাড়ল পাকিস্তানের ওপরে। বলা যেতে পারে, এদিন ব্যাটে-বলে অপ্রতিরোধ্য থাকা ইংরেজ বাহিনীর কাছে একপ্রকার বশ্যতাই স্বীকার করলেন কোহলি-পন্থরা।