আবহাওয়া দফতরের নথি বলছে, ১৯৯৭ সালের পর এই বছরের জুন মাসই মহানগরের শুষ্কতম জুন মাস। গত বছর ২৬ জুন ১৬২.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল আলিপুরে। এ বার গোটা জুন মিলিয়ে কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ মাত্র ৯১ মিলিমিটার। জুনের শেষে ঘাটতি ৬৮%।
তবে শুধুমাত্র মহানগরীর উপরেই যে নির্দয় প্রকৃতি, এরকম আদৌ নয়। সার্বিক ভাবে রাজ্যের ছবি, দেশের ছবি প্রায় এক। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ছাড়া দার্জিলিং থেকে পুরুলিয়া, সব জেলাতেই ঘাটতির পাহাড়। জুন শেষে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘাটতির পরিমাণ ৫৮%। এই পরিস্থিতি গত দশ বছরে কখনও হয়নি। তিন ভাগের এক ভাগ বৃষ্টি হয়নি দেশে। ২০০৯ ও ২০১৪ সালের খরার বছরের খুব কাছাকাছি থাকবে চলতি মরসুমে জুনের অনাবৃষ্টি।
২০০৯ সালে তীব্র এল নিনোর দাপটে তেমন বৃষ্টিই হয়নি দেশে। এবছরও রয়েছে এল নিনোর প্রভাব। ২০১৪ ও ২০১৫ পর পর দু’বছর আবার ঘাটতি বর্ষা। তখনও দায়ী ছিল এল নিনো, অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ জলতল। এতেই ক্ষতবিক্ষত বর্ষা। চলতি মরশুমে বর্ষা শুরু থেকেই নড়বড়ে। সাত দিন দেরিতে কেরালায় ঢুকেছে বর্ষা। কলকাতায় এসেছে ২১ জুন। ১৯৮৩ সালের পর এতটা দেরি এই প্রথম। সেই দেরির মাসুলই এখন গুনছে গোটা দেশ।
এমন দুর্বল বর্ষাকে অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন। আবহবিদরা তা একেবারেই মানতে নারাজ। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, আগেও বেশ কয়েকবার এরকম কম বৃষ্টি হয়েছে। আসলে বর্ষা প্রতিবারই আলাদা চরিত্র নিয়ে হাজির হয়। যেটা বলা যায়, এই পরিবর্তনশীলতার হার বেড়েছে। আর বেড়েছে চরম বৃষ্টির ঘটনা”।
অবশ্য একদিনও ভারী বৃষ্টি না-হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে কলকাতা পুরসভা। জল জমার বিন্দুমাত্র সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। কিন্তু জলের জন্য দেশজোড়া হাহাকার বেড়েই চলেছে। তলানিতে পৌঁছেছে দেশের ৯১টি জলাধারের জল। তবে বৃষ্টি কম হওয়ার চাষবাসের বিষয়ে বর্ধমান পশ্চিমের জেলা কৃষি অধিকর্তা সাগর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জুনের ২৩-২৫ বেশ খানিকটা বৃষ্টি হয়েছিল। ওই তিন দিনের বৃষ্টিতে জেলার ৪,৩০০ হেক্টর জমির বীজতলা পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে। এর পরও যদি বৃষ্টি না-হয়, তা হলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। চারার বয়স বেড়ে যাবে। তবে একবারে গোটা মাসের বৃষ্টি হয়ে গেলেও লাভ হবে না। তাতে ক্ষতিই বেশি”।