বিগত ৮ বছরে একাধিক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে বাংলা। একদিকে কন্যাশ্রী, উৎকর্ষ বাংলা, সবুজসাথীর মতো প্রকল্পগুলি যেমন পেয়েছে আন্তর্জাতিক সাফল্য, তেমনি কেন্দ্রীয় রিপোর্টে ১০০ দিনের কাজে পরপর তিনবার বাংলার মুকুটে উঠেছে সেরার শিরোপা। পঞ্চায়েত-গ্রামোন্নয়ন এবং রেশন ব্যবস্থাতেও সারা দেশের কাছে এ রাজ্য হয়ে উঠেছে রোল মডেল। শুধু তাই নয়। আর্থিক বৃদ্ধি থেকে কৃষি, স্বাস্থ্যের সূচক থেকে স্কুলে ছাত্র ভর্তি— সব ক্ষেত্রেই জাতীয় গড়ের থেকেও ‘এগিয়ে বাংলা’ বলে দাবি করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার বেকারত্বের হার নিয়ে কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মমতার দাবিকেই মান্যতা দিল।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সদ্য প্রকাশিত সমীক্ষা বলছে, ২০১৭-১৮-য় দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ। যা ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। সেই তুলনায় বাংলায় বেকারত্বের হার অনেকটাই কম— ৪.৬ শতাংশ। যার অর্থ, গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এ রাজ্যেই। কর্মসংস্থান তৈরি ও বেকারত্ব দূরীকরণে এগিয়ে মমতার বাংলাই। অন্যদিকে, বড় রাজ্যগুলির মধ্যে তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, তেলঙ্গানা, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, কেরল, ঝাড়খণ্ড, আসাম, উড়িষ্যার মতো ১১টি রাজ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের থেকে বেশি। যার মধ্যে বেশিরভাগ রাজ্যেই সরকারে বা সরকারের জোটসঙ্গী হিসেবে রয়েছে বিজেপি। তবে শুধু সার্বিক ভাবে নয়, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে রাজ্যের বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় কম। শহর এবং গ্রামেও রাজ্যে বেকারত্বের হার কম।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এর পুরো কৃতিত্ব দিচ্ছেন শ্রমনিবিড় শিল্পে জোর দেওয়ার কৌশলকে। তাঁর কথায়, ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর রাকেশ মোহন সওয়াল করেছেন, শ্রমনিবিড় কারখানা শিল্পে জোর দিতে হবে। যাতে কর্মসংস্থান বেশি হয়। কীভাবে তা করতে হয়, তা বাংলার থেকে অন্য রাজ্য শিখতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় বানতলার চর্মশিল্পে ১০-১৫ হাজার লোক কাজ করতেন। এখন ২.২০ লক্ষ মানুষ কাজ করছেন। কানপুর থেকে চর্মশিল্প বাংলায় উঠে আসছে। রত্ন-অলঙ্কার, পেট্রো-রসায়নের অনুসারী শিল্প, ফাউন্ড্রি, বস্ত্র, অ্যাপারেলের মতো শ্রমনিবিড় শিল্পে পরিকল্পিত ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। টাটা হিতাচি, গ্রাফাইট ইন্ডিয়ার মতো ভারী শিল্প আসায় অনুসারী শিল্প গড়ে উঠছে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষেই বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে মুখমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘রাজ্যে বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমে গেছে।’ একইসঙ্গে আগামী ২ বছরের মধ্যে ১২ লাখ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি মতো বেকার যুবকদের জন্য মমতা এনেছেন যুবশ্রী প্রকল্প। পাশাপাশি, রাজ্যের যুব প্রজন্মের জন্য ‘যুবশ্রী অর্পণ’ নামেও একটি নতুন প্রকল্পেরও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আবার ৫০,০০০ ছেলেমেয়েকে ব্যবসার জন্য ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়াও বাংলায় বেকারদের স্বনির্ভর করতে ৩৭,৫০০ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণাও করেন মমতা। যার সাহায্যে ই-রিকশা কিনতে পারবেন তারা। জানা গেছে, মোট ১০ হাজার ই-রিকশা বিলির উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য। শুধু তাই নয়, ছেলেমেয়েদের দক্ষতা বাড়াতে উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পও চালু হয়েছে।