সেমিফাইনালের টিকিট কার্যত ‘বুক’ করে ফেললেন বিরাট কোহালিরা। ভারতীয় দল যে-রকম টগবগে ঘোড়ার মতো ছুটছে, তাতে কিছু অঘটন ঘটার আশঙ্কা নেই। গতকাল বিশ্বকাপে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচের শেষ উইকেট, অসহায় চোখমুখ নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে। কার্টলে অ্যামব্রোজ তখনও ঘাড় নাড়ছেন আর বলে চলেছেন, ‘‘এ ভাবে উইকেট ছুড়ে দিতে এসেছে ওরা? ভুলে যাচ্ছে যে, বিশ্বকাপে খেলছে!’’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের সঙ্গে কিছু দিন আগেও যুক্ত ছিলেন অ্যামব্রোজ। এখন আর নেই। তিরাশির সেই বর্ণময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ অস্তমিত হয়েছে অনেক দিন হল। বিশ্বকাপে এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে কাপ অভিযান শুরু করেছিল কপিলের ভারত। কিন্তু সেই ম্যাচেও শেষ উইকেটে অ্যান্ডি রবার্টস আর জোয়েল গার্নার মরিয়া লড়াই চালিয়েছিলেন। সেখানেই ২০১৯ বিশ্বকাপের বিধান সম্ভবত লেখা হয়ে থাকল। এ বারের মতো বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
ওয়াংখেড়ের ফাইনালে সেই ছক্কা মেরে জেতানো থেকে ক্রিকেটে তৈরি হয়ে যায় জনপ্রিয় নতুন লাইন— ‘ধোনি ফিনিশেস ইন স্টাইল’। ফিনিশার শব্দটাও সম্ভবত সেখান থেকেই তৈরি। এই লাইনটা যিনি চালু করেছিলেন, তাঁর নাম রবি শাস্ত্রী। ওয়াংখেড়ের ফাইনালে তখন তিনি ছিলেন ধারাভাষ্যকার। ধোনি ছক্কা মেরে জেতানোর সময় শাস্ত্রী বলে ওঠেন, ‘‘ধোনি ফিনিশেস ইন স্টাইল। পার্টি বিগিনস অ্যাট মেরিন ড্রাইভ।’’ শাস্ত্রী এখন ভারতীয় দলের হেড কোচ। ধোনির প্রতি অগাধ আস্থা। যেমন আস্থা অধিনায়কের। এ দিনও অগ্রজকে নিয়ে বলে গেলেন অনুজ, ‘‘সকলেরই খারাপ দিন যায়, কিন্তু ওর একটা খারাপ দিন গেলেই সকলে আক্রমণ শুরু করে দেয়। তাতে আমাদের মনোভাবে কোনও পরিবর্তন হয় না। ড্রেসিংরুমে আমরা সব সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।’’ ধোনি যখন শেষ বলে ছক্কা মেরে দৌড়ে দৌড়ে ফিরছেন ওই ড্রেসিংরুমেই, কোহালিকে দেখা গেল সম্ভ্রমে ঠোঁট উল্টে হাততালি দিচ্ছেন।
শেষ পর্যন্ত ধোনি করলেন ৬১ বলে ৫৬। আবারও রানের চেয়ে বল বেশি। ভারতীয় বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুরমুশ করে দেওয়ায় স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা উঠল না। তা বলে একেবারে উপেক্ষা করা যাবে না কিছু পরিসংখ্যান। প্রথম ৪০ বলে করেছেন ২০ রান। ৬১ বলের ইনিংসে ২৭টি বলে কোনও রান করতে পারেননি। এই নেতিয়ে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে হয়তো বড় হয়ে দেখা দিল না। অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দল বিপাকে ফেলতে পারে। হার্দিক পাণ্ড্য এবং ধোনি শেষ দশ ওভারে তুলে দিলেন ৮২। এর মধ্যে শেষের ওভার বাদ দিলে বেশি আগ্রাসী ছিলেন হার্দিকই। তেমনই ১২৫ রানে জয়ে বড় অবদান মহম্মদ শামির দুর্দান্ত ওপেনিং স্পেলের।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডও তাই আর অঘটনের চিত্রনাট্য লিখতে যায়নি। ছত্রিশ বছর আগে ফেভারিটকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল আন্ডারডগ। সে-দিন জন্ম নেওয়া নতুন এক শক্তি আজ ক্রিকেটের মহাশক্তি। তারাই জিতল! ফেভারিটই জিতল!
ম্যাঞ্চেস্টার এ দিন আর ‘রেনচেস্টার’ নয়, সত্যিই ‘সানচেস্টার’। সকাল থেকে উজ্জ্বল রোদ। কিন্তু ধোনি যখন নামছেন, স্কোরবোর্ডে আচমকাই অন্ধকার। ঊনত্রিশতম ওভারে ভারত ১৪০-৪। কেমার রোচ দারুণ সুইং করাচ্ছেন। তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন সাত ওভারে। ধোনি আসতেই তাঁকে বাড়তি স্লিপ দিয়ে স্বাগত জানালেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।