লোকসভা ভোটের ফলাফল খুব একটা আশানুরূপ হয়নি। নিজেদের ভোট শতাংশ বাড়লেও, বিজেপির উত্থান এ রাজ্যে চোখে পড়ার মতো। তাই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকার বার্তা দিতে জেলায় জেলায় কর্মীসভা শুরু করলেন তৃণমূল নেতারা। এদিন ময়দানে নেমে পড়লেন পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূল নেতারাও। দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ, কার্যকরী সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, জেলার বেশ কয়েকটি বিধানসভার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা অনুব্রত মণ্ডলরা নিজেদের এলাকায় কর্মিসভা শুরু করে দিয়েছেন।
এবারের লোকসভা ভোটে জেলার মধ্যে কাটোয়া ও গলসি বিধানসভা এলাকায় এবং জেলার পুরসভাগুলিতে ফল তেমন একটা ভাল হয়নি। জেতা বিধানসভাগুলিতে ভোট বেড়েছে বিজেপির। বুথভিত্তিক ফলাফল দেখে ব্লক ভিত্তিক সভা শুরু করেছেন দলীয় নেতৃত্ব। সামনের বছর পুরভোট। ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচন। তাই এখন থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন দলের নেতারা।
মন্তেশ্বর ব্লকে সভা করার অভিজ্ঞতা থেকে দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, “মন্তেশ্বর সহ জেলার বেশ কয়েকটি বুথে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট করেছে বিজেপি। তার একটা বড় প্রভাব ভোটবাক্সে পড়েছে। তবু আমরা বুথ ধরে ধরে ফলাফল পর্যালোচনা করছি।” আবার রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি বলছিলেন, “কাটোয়ায় লোকসভা ভোট আর বিধানসভা-পুরসভা ভোটে এক তত্ত্ব মেনে ভোট হয় না। আমার বিশ্বাস পুরভোট বা বিধানসভা ভোটে মানুষ নিজেদের স্বার্থে মমতা ব্যানার্জিকেই চাইবেন। তবু আমরা আত্মতুষ্ট না হয়ে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে ফলাফল বিশ্লেষণ করছি।”
এদিকে কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটে সভা করতে এসে অনুব্রত মণ্ডল স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বিজেপি নিয়ে নিজেদের কর্মীদের বলে যান, “ভয়ের কিছু নেই। চোখ রাঙালে পাল্টা চোখ রাঙান। একটা আঙুল তুললে জোড়া আঙুল তুলুন। আমাদের কর্মীদের মারধর, ঘরবাড়ি ভাঙা বরদাস্ত করব না। পুলিশকে বলেছি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।” এছাড়া নেতারা দলীয় কর্মীদের পরামর্শ দেন, গুটিয়ে না থেকে জনসংযোগে জোর বাড়াতে। মানুষকে পাশে টানতে। দলের সুবিধা হল, পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলি দলের নিয়ন্ত্রণে থাকায় কাজ করার পরিসর রয়েছে। সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলি থেকে প্রকৃত প্রাপকরা যাতে বঞ্চিত না হন, সেটা ঠিকঠাক দেখতে হবে। তা হলেই অনেকটা কাজ হয়ে যাবে।
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের স্পষ্ট বক্তব্য, মানুষের কাছে উন্নয়নের সুফল অনেকটাই পৌঁছে দেওয়া গেছে। যেটুকু যায়নি, তা যাতে আগামী দিনগুলিতে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে সকলকেই। বহু মানুষের দাবি, ‘মমতা ব্যানার্জির মত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো মুখ্যমন্ত্রী সারা দেশেই বিরল। তাই তাঁর নির্দেশ পুরোপুরি পালন করা হচ্ছে কিনা, তা তৃণমূল নেতাদেরই দেখতে হবে। নীচের স্তরের কিছু নেতার আচরণও বদলাতে হবে।’ ঘুরে দাঁড়াতে গেলে এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন দলের শুভানুধ্যায়ীরা।