‘খুব কাছ থেকে পর পর দু’বার গুলি চালিয়েছিলাম। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরই এলাকা ছাড়ি।’ অবশেষে ছ’বছর পর সামনে এল মহারাষ্ট্রের বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকরকে হত্যার মূলচক্রী শারদ কালাসকরের স্বীকারোক্তি। এছাড়া কীভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, নেপথ্যে কারা ছিলেন, ঘটনার দিন ঠিক কী ঘটেছিল, ১৪ পাতার স্বীকারোক্তিতে সেই বর্ণনাও দিয়েছেন কালাসকর।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের অগস্ট থেকে কয়েক বছরের মধ্যে গোবিন্দ পানসারে, এম এম কালবুর্গি, সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের মতো বিশিষ্টজন ও যুক্তিবাদীরা খুন হন। তাঁদের মধ্যে প্রথম খুন হন দাভোলকর। ১৪ পাতার ওই স্বীকারোক্তিতে শারদ কালাসকার জানিয়েছে, নরেন্দ্র দাভোলকর-সহ সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ ও গোবিন্দ পানসারেকে হত্যার মূলচক্রী তিনিই। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২০ অাগস্ট সকালে পুণেতে বাড়ির কাছেই খুন হন ৬৭ বছরের যুক্তিবাদী ও সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকর। তখন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ই মাথায় গুলি করে তাঁকে খুন করে দুষ্কৃতীরা।
ঘটনার পর পরই তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই। প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালে নালাসোপাড়ার একটি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি শরদ কালাসকরকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র সন্ত্রাস দমন শাখা। তখন থেকেই জেলে বন্দী তিনি। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতেই খুনের মূল চক্রী বীরেন্দ্র তাউড়েকেও গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবং সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতেই খুনের কথা স্বীকার করে লিখিত বয়ান দেয় কালাসকর। সেই বয়ানের ভিত্তিতেই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। কালাসকরের সেই বয়ানই সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের হাতে এসেছে।
বয়ানে তিনি বলেছেন, ‘আগে থেকেই আমাকে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, দাভোলকর প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণে বেরোন। সেই মতো ঘটনার দিন আমি সকাল থেকেই এলাকায় অপেক্ষা করছিলাম। উনি একটি ব্রিজের উপর উঠতেই খুব কাছ থেকে দেশি পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করি। উনি পড়ে যাওয়ার পর ফের গুলি চালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু গুলি আটকে যায়। সেটি বের করে ফেলে দিয়ে ডান চোখের কাছে আরও একটি গুলি চালিয়ে দিই। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরই ওখান থেকে সরে পড়ি। ইতিমধ্যে আমার সঙ্গে থাকা আর এক জনও কাছাকাছি চলে আসে এবং গুলি চালায়।’
খুনের মূল চক্রী কারা, তা-ও স্পষ্ট করেছেন কালাসকর। তাঁর দাবি, ‘একটি হিন্দু কট্টরপন্থী সংগঠনের সদস্য বীরেন্দ্র তাউড়ে আমার মগজ ধোলাই করেন। তাঁদের সংগঠনের আদর্শের পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি চলতে থাকে আগ্নেয়াস্ত্র চালানো, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণও। তার পর এক দিন বলা হয়, কয়েক জন যুক্তিবাদীকে খুন করতে হবে। সেই তালিকায় আমার দায়িত্ব পড়েছিল দাভোলকরকে খুন করার। আমার ওপর নির্দেশ ছিল, মাথায় গুলি করতে হবে, যাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।’
উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগেই নরেন্দ্র দাভোলকার, গৌরী লঙ্কেশ ও গোবিন্দ পানসারে হত্যা মামলায় বোম্বে হাইকোর্টের কাছে ধমক খেয়েছিল মহারাষ্ট্র সরকার। তারপরই শরদ কালাসকরকে জেরা করা শুরু করে মহারাষ্ট্র পুলিশ। অবশেষে চাপে পড়েই মুখ খুলেছেন মূলচক্রী কালাসকর। জাতীয় এক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে তিনি সনাতন সংস্থা নামে হিন্দু সংগঠনের সমর্থক ছিল। এই সংস্থাই দীপিকা পাডুকোন অভিনীত পদ্মাবত ছবির সেটে ভাঙচুর চালিয়েছিল বলে জানা গেছে।