আবারও সেই মহারাষ্ট্র। আবারও সেই সরকার থেকে গাছ কেটে ফেলার নিদান। কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে এসেছিল, বুলেট ট্রেনের লাইন বসানোর জন্য কেটে ফেলা হবে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এবার শোনা গেল, রাস্তা নির্মাণের জন্য কেটে সাফ করা হবে ১ লক্ষ গাছ। যে এলাকায় তীব্র জলকষ্টে ভুগছেন বাসিন্দারা, জলের অভাবে চাষের জমি হয়েছে ফুটিফাটা, সেখানে এভাবে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলার খবরে তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। মুম্বই থেকে নাগপুর পর্যন্ত তৈরি হবে ৭০১ কিলোমিটার লম্বা হাইওয়ে। জানা গিয়েছে, বিদর্ভের অমরাবতী এলাকা দিয়েই যাবে এই হাইওয়ে।
এই সুদীর্ঘ হাইওয়ের ২৫৮ কিলোমিটার রাস্তা অমরাবতী, ওয়াশিম এবং বুলধনা– মহারাষ্ট্রের এই তিনটি জেলার মধ্যে দিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এই এলাকাতেই পড়বে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত ইকো সেনসিটিভ জোন। যার মধ্যে রয়েছে, কাটেপূর্ণা এবং করঞ্জা সোহাল ব্ল্যাকবাক- এই দুটো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু হাইওয়ে বানাতে গেলে কাটতে হবে ১৬৬ একর বনভূমি। তেমনটাই জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক।
গত ২৬ মার্চ এই প্রকল্পের জন্য এলাকা সার্ভে করতে এসেছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষ দল। গোটা এলাকা পর্যবেক্ষণ করার পর ওই দলের তরফে জানানো হয়েছে, যে দীর্ঘ হাইওয়ে মুম্বই এবং নাগপুরকে যুক্ত করবে তা বানাতে গেলে প্রায় ১ লক্ষ গাছ কাটতে হবে। কিন্তু যা গাছ কাটা হবে সেই সব পুনরায় বসিয়ে দেওয়া হবে বলেও দাবি করেছে প্রশাসন। যে যে প্রজাতির গাছ কাটা পড়বে সেগুলো জেনে নিয়ে উচ্চমানের অ্যাফরেস্টেশন পদ্ধতির সাহায্যে পুনরায় গাছ লাগিয়ে দেওয়া বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক।
মহারাষ্ট্র স্টেট রোড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরশন (এমএসআরডিসি)-র তরফে জানানো হয়েছে এই হাইওয়ে প্রকল্পের বাজেট প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এই হাইওয়ের সাহায্যে যে কেবলমাত্র মুম্বই এবং নাগপুরের মধ্যে যোগাযোগ সুদৃঢ় হবে তাই নয়, আশেপাশে কৃষি ভিত্তিক শিল্পের কারখানাগুলোরও উন্নতি হবে। হাইওয়ে তৈরি হলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হবে। ফলে কারখানায় কাঁচামাল আনা এবং শিল্পজাত দ্রব্য আমদানী-রপ্তানীও অনেক সহজে সম্ভব হবে। তার ফলে রমরমা হবে এই হাইওয়ের আশেপাশে থাকা কারখানাগুলোর। এ ছাড়াও ওই হাইওয়ের আশেপাশের গ্রামগুলিও নানান সুবিধা পাবে।
কিন্তু এমএসআরডিসি নিজেদের প্রকল্পকে যতই ভালো প্রমাণ করার চেষ্টা করুক না কেন, এ প্রকল্পের ফলে পরিবেশের যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হবে তা বলছেন অনেকেই। এমনিতেই জলসংকটে ভুগছে ভারত। পরিবেশবিদরা বলছেন, আগামী বছরের মধ্যেই দেশের ২১টি শহর জলশূন্য হয়ে যাবে। এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টও। ইতিমধ্যেই জল সংকটের তালিকায় উঠে এসেছে মহারাষ্ট্রের নাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার ভাইরাল হয়েছে ফুটিফাটা চাষজমির ছবি। তার মধ্যেই শোনা গেল যে প্রায় ১ লক্ষ গাছ কেটে ফেলা হবে এই হাইওয়ে প্রকল্পের জন্য। সেই আশঙ্কার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আবার বিপুল পরিমাণ গাছ কাটার খবর পাওয়া গেল সেই মহারাষ্ট থেকেই।