সামনেই বর্ষা। তাই সেসময় যাতে জল ও বিদ্যুতে টান না পড়ে, তা নিয়ে এবার দুই দফতরের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে জল ও বিদ্যুৎ অপচয় রোখার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে এই বৈঠকে ছিলেন বিদ্যুৎ এবং সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীরা। ছিলেন মুখ্য সচিব মলয় দে ও সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব ও আধিকারিকেরাও। বৈঠকের পর বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, পরিবেশ দূষণ রুখতে ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে উদ্যোগী হয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। জেলায় জেলায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিয়ে সচেতনতা ‘সেভ এনার্জি (পাওয়ার), সেভ আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ অর্থাৎ শক্তি বাঁচাও (বিদ্যুৎ), বিশ্ব ও পরিবেশ বাঁচাও কর্মসূচী নেওয়া হচ্ছে।
সব জেলার সাধারণ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ দফতরের আবেদন, সপ্তাহে একদিন আধ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ রাখুন। এলইডি বাল্ব ব্যবহার করুন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই উদ্যোগ বলে জানান বিদ্যুৎমন্ত্রী। তবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কাউকে জোর করা হবে না। যাঁরা চাইবেন তাঁরাই বন্ধ রাখবেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী নিজেও সপ্তাহে একদিন ১ ঘণ্টার জন্য তাঁর দফতরের সমস্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর আবেদন, সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তাতে আর্থিকভাবেও তাঁদের সাশ্রয় হবে, সেরকমই পরিবেশও কিছুটা সুরক্ষিত হবে।
বিদ্যুতের জোগানের কোনও অভাব নেই, বিদ্যুৎ চুরি রুখতেও দফতর অনেকাংশে সফল বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। ৩৪ শতাংশ থেকে বিদ্যুৎ চুরি কমে ২২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে গত এক বছরে বিদ্যুৎ দফতরের অতিরিক্ত ১০১ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলেও জানা গেছে। বর্ষায় বিদ্যুৎ সরবরাহে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যুৎ দফতরকে নির্দেশ দেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ‘এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনও ঘাটতি নেই। তবে দেওচাপাচামি কয়লাখনি থেকে কয়লা তুলতে পারলে অনেক সুবিধা হত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের গড়িমসির কারণে ২ বছর পরেও রাজ্য সরকারের হাতে এই কয়লাখনি আসেনি।’
ক্ষুদ্র সেচের ৬০৭টি প্রকল্প বিদ্যুৎ দফতরের অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। ওই বৈঠকে সেই বকেয়া প্রকল্পগুলি অনুমোদনের ব্যবস্থা করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বিদ্যুৎমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন, দু’মাসের মধ্যে সমস্ত প্রকল্পে অনুমোদন দিয়ে দিতে হবে, যাতে কৃষিকাজে কোনও সমস্যা না দেখা দেয়। বিশ্ব জুড়ে ভূগর্ভস্থ জল যেভাবে কমতে শুরু করেছে তার ধাক্কা এদেশেও এসেছে। দক্ষিণবঙ্গও এই সমস্যা থেকে খুব দূরে নেই। এই সমস্যার যাতে দ্রুত সমাধান করা যায় তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। মুখ্য সচিব মলয় দে’র পৌরোহিত্যে এই কমিটিতে থাকছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর, জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর এবং মৎস্য দফতর। প্রতি মাসে ওই কমিটির একটি করে বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।