গত মে মাসে চাষাবাদ করতে প্যারোলের আবেদন করেছিলেন খুন ও নাবালিকাদের ধর্ষণে দোষী, স্বঘোষিত ঈশ্বর গুরমিত রাম রহিম। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট জানিয়েছিল, গুরমিত রাম রহিম সিং জেলের বাইরে বেরোলে ২০১৭ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কিন্তু, একমাস বাদে সেই পর্যবেক্ষণকে কার্যত পাত্তাই দিল না রাজ্য সরকার। তা অমান্য করে ৫১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ধর্মগুরুর আবেদনের স্বপক্ষে সুপারিশ পাঠাল আদালতে!
গত ২১ জুন প্যারোলের আবেদন করেছেন খুন ও নাবালিকাদের ধর্ষণে দোষী, স্বঘোষিত ঈশ্বর গুরমিত রাম রহিম। এবং তা একেবারে ৪২ দিনের প্যারোল! প্যারোলে ছাড়া পাওয়ার কারণ হিসাবে রাম রহিম জানান, তাঁর ‘চাষাবাদের কিছু কাজ’ বাকি রয়েছে। আর সেই কাজ করার জন্যই তিনি জেরের বাইরে যেতে চাইছেন। রাম রহিমের আর্জির পর এবার হরিয়ানা সরকার নিজে এই সুপারিশ জানাল। হরিয়ানা সরকারের দাবি, শ্রীঘরে বন্দি রাম রহিমের ‘সুন্দর’ ব্যবহারের জন্য় তাঁকে যেন প্যারোলে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই রাজস্ব ও পুলিশ দফতরের থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এক সাংবাদিকের খুন ও দুই কিশোরী ধর্ষণে দোষী, ডেরা সাচ্চা সওদা প্রধানের প্যারোলের পক্ষে সওয়াল শুরু করেছেন হরিয়ানার বিজেপি নেতারাও। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও! তাঁর বক্তব্য, ‘প্যারোলের অধিকার সবার আছে। সেক্ষেত্রে আমরা কাউকে আটকাতে পারি না।’ তাই বলে গুরমিত রাম রহিমের মতো প্রমাণিত অপরাধীও? আসলে ডেরা সাচ্চা সওদা সম্প্রদায় তথা গুরমিত রাম রহিমের ভক্তকুল অসংখ্য। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার রাজনীতিকরা তাঁকে তোয়াজ করে চলেন, ভক্তকুল তাঁরই কথায় ভোট দেয় বলে। এদিকে অক্টোবরে হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন। তাই রাম রহিমের প্যারোল নিয়ে বিজেপির এত তাড়া বলে মনে করছে বিরোধীরা।
স্বরাজ পার্টির যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘রাম রহিমকে প্যারোলে ছাড়া হলে আমরা সর্বাত্মক বিরোধীতা করব।’ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের কটাক্ষ, ‘এবার কি রাম রহিমকে বিজেপির তারকা প্রচারকের ভূমিকায় দেখা যাবে? একাধিক সন্ত্রাসে অভিযুক্ত কেউ যদি সাংসদ হতে পারেন, তাহলে নতুন ভারতে একজন ধর্ষকও মন্ত্রী হতেই পারেন!’ তবে এরই মধ্যে হরিয়ানার বিতর্কিত শিক্ষামন্ত্রী অনিল ভিজ রাম রহিমকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। বন্দীদশায় স্বঘোষিত ঈশ্বরের ‘ভাল আচরণের’ ওজর দেখিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘প্যারোল পাওয়া ওঁর অধিকার।’ আর রাজ্যের কারামন্ত্রী কে এল পানোয়ার জানিয়েছেন, ‘উনি প্যারোলের আবেদন করেছেন। আমরা তা সিরসা জেলা প্রশাসনকে পাঠিয়েছি।’
জানা গেছে, সিরসা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থাদের রিপোর্টের অপেক্ষায় জেলা প্রশাসন। তবে পুলিশ আধিকারিকরা কিন্তু এ কথাই বলছেন যে, রাম রহিমের প্যারোল হলে, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে। ঠিক যেমন দু’বছর আগে তাঁর সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হরিয়ানায় আগুন জ্বলেছিল। পাঁচকুলা দায়রা আদালতে সাজা ঘোষণা হওয়ায় ওই এলাকায় একদিনে ৪১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ২৬০ জন। কিন্ত, এটাই মানতে চাইছে না হরিয়ানা সরকার! বরং তার সমর্থনে আদালতে সুপারিশ করছে তারা। আসলে ভোট বড় বালাই।