ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিলেন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর অলরাউন্ডার হিসেবে, ছিলেন বর্তমান সময়ের সেরাদের একজন। তবে বিশ্বকাপের মাঝে হয়ে উঠলেন যেন সর্বকালের সেরাদের একজন। কালকের ম্যাচেও মেতে উঠলেন রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায়। ব্যাট হাতে শুধুই অর্ধশতরান করলেন না, জ্বলে উঠলেন বল হাতে। নিলেন মূল্যবান ৫ টি উইকেট। যার ফলে বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি অনায়াসে জিতলো।
এবারের বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং—সব বিভাগেই রাঙিয়ে চলেছেন। প্রত্যেকদিনই ধারাবাহিক অসাধারণ ব্যাটিং, সঙ্গে দুর্দান্ত বোলিং। তবে কালকের ম্যাচে যেন অঘটন সৃষ্টি করলেন। একার হাতেই নিলেন আফগানদের ৫ উইকেট। রেকর্ড করলেন আরো একবার। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো বোলার হিসেবেই শুধু ৫ উইকেটই নিলেন না, একইসঙ্গে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারেও সেরা বোলিংটাই কালকে করেছেন সাকিব।
এবারের বিশ্বকাপে সাকিবের ব্যাট থেকে প্রথম সেঞ্চুরি আসে গত ৮ই জুন, কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ১১৯ বলে করেছিলেন ১২১ রান। মেরেছিলেন ১২ টি চার ও ১ টি ছয়। স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০ এর ওপরে। গত মঙ্গলবার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিনি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন। টনটনে সেই ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের রীতিমতো নাকানিচোবানি খাইয়ে ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। আর সেই ম্যাচের নায়ক ছিলেন এই সাকিব আল হাসান। সেদিন ২ টি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ১২৪ রান করে অপরাজিতও থেকে যান সাকিব। আর এই ম্যাচের পরই শাকিবের নামের পাশে লেখা হয়ে যায় একাধিক রেকর্ড।
বিশ্বকাপে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেটের ‘ডাবল’ এর মালিকও হয়ে গেছেন সাকিব আল হাসান। আফগানদের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে দরকার ছিল ৩৫ রান, আর বল হাতে ২ উইকেট। ওই ম্যাচে দুটোই পেয়ে গেছেন সাকিব। অপরাজিত ৫১ রান আর ৫ উইকেট নিয়ে অনন্য এক রেকর্ডের মালিক হয়ে গেছেন তিনি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে হাতে গোনা কয়েকজন ক্রিকেটারের দলে নাম লিখিয়ে ১০০০ রানের ঘরে ঢুকলেন তিনি। সঙ্গে ৩০ উইকেটের ‘ডাবল’ এরও মালিক এখন সাকিব। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো অলরাউন্ডার হিসেবে ১০০০ রান আর ৩০ উইকেট পাওয়ার কীর্তি একমাত্র তাঁরই। আর যুবরাজ সিংয়ের পর দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্বকাপের একই ম্যাচে করেছেন অর্ধশতরান আর বল হাতে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ৫ উইকেটের কীর্তি গড়া, ক্যারিয়ারসেরা বোলিং— যেন স্বপ্নের মতো বোলিং সাকিবের। এই বিশ্বকাপে এটা করাই তাঁর বাকি ছিল। ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন। ২ টি শতরান, ৩ টি অর্ধশতরান করে ৪৭৬ রান করে আবারও রান সংগ্রহের তালিকায় শীর্ষে চলে এসেছেন তিনি। টপকে গেলেন অজি তারকা ডেভিড ওয়ার্নারকে। কালকের ম্যাচের পর একের পর এক রেকর্ড ধরা দিল তাঁর কাছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা বোলিং, প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান। এ বিশ্বকাপের সেরা বোলিং ফিগারও এখন তাঁর।
শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নয়, সাকিবের ছবি আঁকা হলো আরও বড় ক্যানভাসে। স্বয়ং ব্রায়ান লারা উচ্ছ্বসিত বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স নিয়ে। সাকিবের ছবি লারা নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন। অতি উজ্জ্বল এই সাকিবকে দেখে এখনই অনেকে বলে উঠছেন, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটা এখন তাঁকে দিয়ে দিলেই তো হয়!