তিনি দেশে ‘আচ্ছে দিন’-এর ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোট প্রচারে বেরিয়ে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, দেশের বাইরে মজুত কালাে টাকা ফেরত আনার জন্য কড়া ব্যবস্থা নেবেন তিনি। তবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরই বোঝা গিয়েছিল, আদতে তা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জুমলা। কারণ ২০১৬ সালে নোটবন্দীর মূল কারণ হিসেবে কালো টাকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও ঠিক কতটা কালো টাকা মজুত করা আছে দেশের বাইরে সে ব্যাপারে কোন স্পষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি এতদিন। তবে সোমবার এই বিষয়ে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়ল সংসদে। এই রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি, দ্য ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর অ্যাপ্লাইড ইকোনমিক রিসার্চ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দেশের বাইরে মজুত কালো টাকার পরিমাণ সব সময় এক নয়। অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী এই টাকা কমেছে বা বেড়েছে। রিপাের্টে এ-ও বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে দেশের বাইরে জমা থাকা সব থেকে বেশি। কালো টাকার পরিমাণ ৪৯ হাজার
কোটি মার্কিন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ৩৪ লক্ষ কোটি টাকা। ওই সময়কালে মজুদ সব থেকে কম কালো টাকার পরিমাণ ২১ হাজার ৬৪৮ কোটি মার্কিন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি টাকা। ওই তিন সংস্থার দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্মাণ ক্ষেত্র, খনি, ওষুধ, পান মশলা, গুটকা, তামাক, সোনা-রুপা, পণ্য, সিনেমা এবং শিক্ষার মতো বিভিন্ন শিল্পে কালো টাকার পরিমাণ সব থেকে বেশি। তবে দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ঠিক কতটা কালো টাকা মজুদ আছে তা পরিমাপ করার জন্য কোনও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি নেই বলেই জানান হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট আরও জানিয়েছে, ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে প্রতি বছর দেশে মজুত কালো টাকার প্রায় দশ শতাংশ পাঠানো হয়েছে বিদেশে। স্বাভাবিকভাবেই এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে পড়েছেন মোদী। কারণ বিদেশে মজুত কালো টাকা দেশে ফেরানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। যার ফলে মুখ পুড়েছে কেন্দ্রের।