“হঠাৎ কখন সন্ধ্যাবেলায়/ নামহারা ফুল্ গন্ধ এলায়/করে অরুণ কিরণ তুচ্ছ/ উদ্ধত যত শাখার শিখরে রডোডেনড্রনগুচ্ছ”
না, নিতান্ত নামহারা নন তিনি আবার মারাত্মক নামকরাও নন।
ভারত তখন দোদুল্যমানতায়।রান যা করেছে তা হারার মতই। বালিঘড়ির মতই জেতাটাও ফস্কে যাচ্ছিল টিম ইন্ডিয়ার আঙুলের ফাঁক গলে। কোহলি যতটুকু যা করতে পেরেছেন বাকি ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। এমন সময়ে তৃতীয় কাউকে জ্বলে উঠতে হয়। বেরিয়ে এল ঝলমলে তলোয়ার। দ্বিতীয় ওভারে উইকেট নিয়ে যে নাড়াটা দিয়েছিলেন শেষ ওভারে হ্যাট্রিক করে তা সম্পূর্ণ করলেন শামি। ঝলমলে তলোয়ারে রোদ পড়ে ঝিকমিক করে উঠল।
জীবন যন্ত্রণায় বিদ্ধ ছিলেন। স্ত্রী জাহান একের পর এক অভিযোগ এনেছেন তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। এনেছেন ধর্ষণের অভিযোগও। সমর্থকেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এক নারীর বিরুদ্ধে শামির ‘অমানবিকতা’ বারবার উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। বিসিসিআই পর্যন্ত তাঁকে দলে রাখতে চায়নি। শনিবারের হ্যাট্রিক এই সব অভিযোগের বিরুদ্ধে শামির জোরাল জবাব। এই সবের জবাব তো দিতেই হত। আর হ্যাট্রিকের থেকে ভালো জবাব আর কিই বা হতে পারে! ৩ উইকেট নেওয়ার পরে যেভাবে লাফিয়ে উঠেছেন, বোঝা গেছিল তাঁর অন্তর কিভাবে পুড়েছে। বোঝা গেছিল উত্তর দিতে পেরে তিনি তৃপ্ত। ভারতীয় সমর্থকেরা বুঝলেন আর একজন জাত বোলারের জন্ম হল দেশে। বুঝলেন চেতন শর্মার পর আর একজনকে ভারত পেয়েছে যাকে ভরসা করা যায়।
শেষ ওভার ভারতের। আফাগানদের চাই ১৬ রান। তখন ব্যাট করছেন নবি আর একরাম আলি খিল। নবি আইপিএল খেলেছেন।পরিস্থিতি সামলাতে সিদ্ধহস্ত। ১৬ রান কি এমন ব্যাপার! এই সময়ে অধিনায়ক (কোহলি নাকি ধোনি) বল তুলে দিলেন ‘জীবন জর্জরিত’ শামির হাতে। ক্রিকেটে বল হাতে এবার তাঁর অগ্নিপরীক্ষা।
কিন্তু ওভারের প্রথম বলেই চার।ভারত হারের দিকে আরও একটু এগিয়ে গেল আর আফগানিস্তান জয়ের দিকে। দ্বিতীয় বলে ডট। ভারতের উচ্ছ্বাস নেই। আফগানিস্তানও চুপচাপ। তৃতীয় বলে মিডিয়াম পেসে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের পায়ের দিকে বল করলেন শামি। বাধ্য করলেন ক্যাচ তুলতে এবং আউট। প্যাভিলিয়নে ফিরলেন আইপিএল অভিজ্ঞ মহম্মদ নবি। চতুর্থ বলে শামির হাত থেকে বেরিয়ে এল বিষাক্ত ইয়র্কার। ছিটকে গেল আফতাব আলমের মিডল স্টাম্প। ভারত তখন জয়ের গন্ধ পেয়েছে। আর শামি পেয়েছেন হ্যাট্রিকের গন্ধ। পঞ্চম বলে শামি দৌড় শুরু করতেই মুজিবর সরে গেলেন লেগ স্টাম্পের দিকে। ধুরন্ধর শামি লক্ষ্য করেছিলেন সেটা। বিষাক্ত ইয়র্কারটা তাই পড়ল লেগ স্টাম্পেই। আর ভারত শুনল সেই মধুর শব্দ ‘খটাস’। চেতন শর্মার পর বিশ্বকাপ হ্যাট্রিকের রঙিন ইতিহাসে নিজের নাম লেখালেন ভারতের মহম্মদ শামি।
শামি অগ্নিপরীক্ষায় সফল। মারাত্মক নাম করা না হয়েও হ্যাট্রিকের সৌজন্যে হয় গেলেন চিরকালীন। ইতিহাস মনে রাখবে শামিকে। আর ভারতীয় হিসাবে আমরা জানাই স্যালুট শামি, স্যালুট।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত