দল নয়, যেন সার্কাস! দিনের পর দিন যে হারে ‘ডিগবাজি’ খাচ্ছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা, ক্ষণে ক্ষণে নিজেদের অবস্থান বদলাচ্ছেন তাতে ক্রমশই সার্কাসের শো হয়ে উঠছে গোটা গেরুয়া শিবির। এবার যেমন তাদের মত বদলে গেল মাত্র ২৪ ঘণ্টায়। ২৪ ঘণ্টা আগেই প্রশংসায় ধন্য ধন্য করে উঠেছিলেন যাঁরা, তাঁরাই এবার নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতাকে। আর সমালোচনার মূলে সেই ‘কাটমানি’ গান। অবস্থা এমনই যে, কয়েক ঘণ্টা আগেই যে নচিকেতাকে স্বাগত জানানো হয়েছিল দলে। সেই তিনিই এবার গেরুয়া শিবিরের কাছে হয়ে গেলেন ‘ভণ্ড’! নিজেদের মতের অমিল হতেই তাঁকে তির্যক বাক্যবাণে বিদ্ধ করলেন বিজেপির গায়ক-সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন আগেই দলীয় কাউন্সিলরদের বার্তা দিয়েছেন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মানুষকে দিতে গিয়ে কোনও রকমের কাটমানি নেওয়া চলবে ৷ নিয়ে থাকলেও তা ফেরৎ দিতে হবে জনগণকে। মমতার এ হেন সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েই কাটমানি খাওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ‘আগুনপাখি’। তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই লিখে ফেলেছিলেন ‘কাটমানি’ গানটি। যা শনিবার সকালেই নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ধন্য ধন্য করে ওঠেন বাবুল। ‘নচিদা’কে স্বাগত জানান সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। আসলে বাবুল-লকেটরা সবাই তখন ভাবতে শুরু করেছেন, শিবির বদলাতে চলেছেন নচিকেতা। কিন্তু তারপরই মুখ খুলে নচিকেতা সাফ জানিয়ে দেন, এই গানে তিনি কোন রাজনৈতিক রং লাগতে চান না।
তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘দলীয় নেতাদের বিভিন্ন কাজকর্মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিতে একটা প্রভাব তো পড়ছিলই। মমতা এই কাটমানি ফেরত দেওয়ার কথা বলে নতুন একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেন।’ তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘তৃণমূলনেত্রী সঠিক রাস্তা নিয়েছেন। ওঁর কাঁধে বন্দুক রেখে সবটা চালাচ্ছিল এক দল লোক। তাঁদের আর দরকার নেই। মমতা একাই একশো। ওঁর এই সিদ্ধান্তে অনুপ্রাণিত হয়েই গানটা লিখলাম।’ বাবুলকে কটাক্ষ করে নচিকেতা এ-ও বলেন যে, রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মিষ্টান্নের দায়িত্ব তো আর রামকৃষ্ণের নয়। যে যা বোঝার বুঝবে। এরপরই ‘মিস ফায়ার’ হয়ে গিয়েছে বুঝে তড়িঘড়ি নিজের ফেসবুক থেকে নচিকেতার গানটি উড়িয়ে দেন বাবুল।
ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় তিনি বলেন, আমি শুধু গানটারই প্রশংসা করেছিলাম, কোনো রাজনৈতিক দলের নাম বলিনি। তাই প্রশ্নও নেই রাজনীতি খোঁজার। আমি রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মিষ্টিও খেয়েছি, আর ভণ্ড গায়কের গানও শুনেছি। বড্ড বোকা বোকা কথা বলে নিজের সম্মানহানি করছো নচিদা। যদিও নচিকেতাকে এমন আক্রমণের পর তাঁর অনুরাগীরা বাবুলকে বিঁধেছেন। অন্যদিকে, ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নচিকেতাকে ভণ্ড আখ্যা দিলেও, আদতে জনসমক্ষে এসে পড়েছে বাবুলের ভণ্ডামিই। আর যাঁকে দলে টানতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তারা, সেই তিনি যে খোদ মমতার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই ‘কাটমানি’ লিখেছেন, তা জানার অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবিরও।