তিনি যে কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করছেনই, তা একপ্রকার নিশ্চিত। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে আরও একবার সেই কথাই স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী। লোকসভা ভোটে দলের খারাপ ফলের দায় নিয়ে তিনি এবার সরে যেতে চান। একইসঙ্গে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তা নিয়েও মাথা ঘামাবেন না তিনি। কংগ্রেস দলই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। রাহুলের বক্তব্য, “কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বিশ্বাসযোগ্য হওয়া চাই। আমি ওই প্রক্রিয়ায় জড়াচ্ছি না। তাতে সব কিছু আরও জটিল হয়ে যাবে। যা করার আমাদের দলই করবে।”
কংগ্রেসের বিরোধীরা বরাবর অভিযোগ করে এসেছেন, নেহরু-গান্ধী পরিবারই কংগ্রেস দলটি চালনা করে। যোগ্যতা থাক বা না থাক, ওই পরিবারেরই কেউ কংগ্রেসের সভাপতি হন। লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের পরাজয়ের পরে সমালোচনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই নিয়ে ২ বার কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয় ঘটল। ২০১৪ সালে দল পেয়েছিল মাত্র ৪৪ টি আসন। এবার পেয়েছে ৫২ টি। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে মাত্র আটটি বেশি। এমনকি গান্ধী পরিবারের ঘাঁটি বলে পরিচিত অমেঠী আসনে হেরে গিয়েছেন খোদ রাহুল গান্ধী। পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে।
ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল ঘোষণা করেন, পরাজয়ের ১০০ শতাংশ দায়িত্ব নিজে নিচ্ছেন। দলের সভাপতির পদ থেকে এবার ইস্তফা দিতে চান। কিন্তু সেদিনের বৈঠকে ওয়ার্কিং কমিটি তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করেনি।
ইতিমধ্যে কংগ্রেসের অন্যান্য নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, কেবল নেহরু-গান্ধী পরিবারের সদস্যরাই দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেন। কিন্তু রাহুল স্পষ্ট বলে দেন, ” গান্ধী পরিবারের আর কাউকে কংগ্রেসের সভাপতি করা চলবে না। বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বা মা সনিয়া গান্ধীকে যেন পরবর্তী সভাপতি করার কথা না ভাবা হয়।”
স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময় কংগ্রেসের শীর্ষস্থানে নেহরু-গান্ধী পরিবারের কোনও না কোনও সদস্য থেকেছেন। ১৯৯১ সালে কংগ্রেস সভাপতি রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পরে কিছুদিন সীতারাম কেসরী দলের শীর্ষস্থানে ছিলেন। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস বিভিন্ন নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারেনি। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা তখন রাজীব গান্ধীর বিধবা স্ত্রী সনিয়া গান্ধীকে দলের হাল ধরতে বলেন। তাঁদের অনুরোধ এড়াতে না পেরে কংগ্রেসের সভানেত্রী হন সনিয়া। তারপর ওঁর নেতৃত্বেই আবার গোটা দেশে পূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করে কংগ্রেস।