কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। তবে রাজধানীর অন্দরে কান পাতলেই এই গুঞ্জন শোনা যায় যে গান্ধী পরিবারের কাউকে নাকি মোটেই দু’চক্ষে সহ্য করতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও এর কারণটা স্পষ্ট। আসলে, দক্ষ রাজনীতিক মোদী খুব ভালমতোই জানেন, গান্ধী পরিবারের ঐতিহ্য আর তাদের প্রতি ভারতীয়দের সম্মান, যদি শেষ করে দেওয়া যায়, তাহলে কংগ্রেস আপনা-আপনি দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু, মুশকিল হল মোদী যখন নেহরু থেকে শুরু করে রাহুল পর্যন্ত গান্ধী পরিবারের চার প্রজন্মের মুণ্ডপাত করছেন, তখন তাঁর নিজের দলেই বাসা বেঁধে বসে আছেন দুই গান্ধী। তাও রীতিমতো প্রভাবশালী হয়ে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর সেই গান্ধীদেরই ডানা ছাঁটার কাজ শুরু করে দিলেন মোদী-শাহ।
নির্বাচনের আগে থেকেই বরুণ গান্ধীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় বিজেপির। ভোটের আগে প্রকাশ্যে একাধিক ইস্যুতে নিজেরই দলের সমালোচনা করেছিলেন বরুণ। এমনকী এবারে তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও তৈরি হয়েছিল সংশয়। শেষ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে মহাজোট তৈরি হওয়ায় আর ঝুঁকি নেয়নি বিজেপি নেতৃত্ব। টিকিট দেওয়া হয় মানেকা এবং বরুণ দুই সাংসদকেই। শুধু বদলে দেওয়া হয় তাদের নির্বাচনী কেন্দ্র। মানেকা যখন বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন, তখনও দল তাঁর সঙ্গে ছিল না। অসম্মানের ধারাটা সেখানেই শুরু হয়েছিল। যা আরও বাড়ল ভোটের পর।
ভোটের পর যেটা করা হল তাতে একটা বিষয় হয়তো পরিষ্কার, গান্ধীদের আর কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে চাইছেন না মোদী-শাহ। মানেকা গান্ধী দলের দীর্ঘদিনের নেত্রী। গত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু, এবারে আর কোনও মন্ত্রকই জোটেনি। মন্ত্রীসভার যেদিন শপথগ্রহণ হল, সেদিন তাই আফশোসের সুরে মানেকা টুইট করেন, ‘আচ্ছা তো হাম চলতে হ্যায়।’ উল্লেখ্য, আগের সরকারের প্রশংসিত মন্ত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন মানেকা। তিনি মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন, তাহলে হয়তো তাঁকে স্পিকারের পদটি দেওয়া হবে। নিদেনপক্ষে প্রোটেম স্পিকারের পদটি তিনি পাবেনই। কিন্তু, এর কোনওটিই জুটল না তাঁর কপালে।
মঙ্গলবার স্পিকার হিসেবে এনডিএ-র তরফে ওম বিড়লার প্রার্থীপদ ঘোষণা হওয়ার পরই কার্যত সরকারিভাবে ঘোষিত হয়ে গেল, গান্ধী পরিবারের দুই সাংসদ বিজেপির বা সরকারের আর কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকছেন না। যেভাবে মানেকা-বরুণদের সঙ্গে মোদী-শাহরা দূরত্ব তৈরি করছেন, তাতে আগামী লোকসভা পর্যন্ত তাদের পুরোপুরি বিদায় দিয়ে দিলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। এর আগে জন্মলগ্ন থেকে দলের পাশে থাকা লালকৃষ্ণ আডবানী, মুরলী মনোহর যোশীর মতো বর্ষীয়ান নেতাদের ভোটেএ টিকিট না দিয়ে সংসদীয় রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন মোদী-শাহ জুটি। আর এবার দলকে ‘গান্ধী’ মুক্ত করার পথে তাঁরা।