‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – এই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান। মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই যা আদ্যোপান্ত জুমলায় পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়। লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে এনডিএ-র বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হয়ে নরেন্দ্র মোদী সাংসদদের বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করতে হবে। কিন্তু গতকাল শপথগ্রহণ-পর্বে তার কোনও প্রকার চেষ্টা তো চোখে পড়লই না, বরং লোকসভায় বিরোধী শিবিরের সংখ্যালঘু সাংসদেরা শপথ নিতে ওঠামাত্রই বিজেপি সদস্যেরা স্লোগান তুলেছেন— ‘জয় শ্রীরাম’, ‘বন্দে মাতরম’, ‘ভারত মাতা কি জয়’। মুসলিম সাংসদদের কেউ কেউ ‘আল্লা হু আকবর’ ধ্বনি তুলেছেন।
হায়দ্রাবাদের সাংসদ তথা সারা ভারত মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর সভাপতি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি শপথ নেওয়ার সময় বিজেপি সাংসদেরা এমন ভাবে ‘জয় শ্রী রাম’, ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি তোলেন যে ওয়াইসি-ও হাত নেড়ে ইঙ্গিত করেন, ‘আপনারা বলতে থাকুন’। উর্দুতে শপথগ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘জয় ভীম, জয় মিম, তকবির, আল্লা হু আকবর, জয় হিন্দ’। পরে লোকসভা থেকে বেরিয়ে ওয়াইসি বলেন, ‘জানি না, আমাকে দেখলে ওঁদের কেন এ সব মনে পড়ে। আশা করব, সংবিধানের কথাও মনে পড়বে। বিহারের মুজফফরপুরে যে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, তার কথাও মনে পড়বে।’ তিক্ততা চরমে পৌঁছয় সমাজবাদী পার্টির সাংসদ শফিকুর রহমান বর্কের শপথের সময়।
শপথ নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বন্দে মাতরম ইসলামের বিরোধী। আমরা এটা বলতে পারি না।’ বিজেপি সাংসদেরা দাবি করেন, শফিকুরকে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু তিনি পিছু হটেননি। শপথগ্রহণের পর বিজেপি সাংসদেরাও হরেক রকম স্লোগান দিয়েছেন— কেউ বলেছেন ‘জয় শ্রী রাম’, কেউ আবার ‘জয় মোদী, জয় যোগী’। হেমা মালিনী ‘রাধে রাধে’, ‘কৃষ্ণম বন্দে, জগৎ গুরু’ বলেছেন। গোরক্ষপুরের সাংসদ ভোজপুরী অভিনেতা রবি কিষাণ আবার স্লোগান তুলেছেন, ‘হর হর মহাদেব’, ‘গুরু গোরক্ষনাথ কি জয়’। উন্নাও-এর সাংসদ সাক্ষী মহারাজের শপথের পর স্লোগান ওঠে, ‘মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে’।
কংগ্রেস সাংসদেরা প্রথমে প্রতিবাদ করলেও এ নিয়ে অন্য রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরির আশঙ্কায় চুপ থেকেছেন। স্পিকারের চেয়ার থেকে শপথবাক্য ছাড়া অন্য কিছু বলতে বারণ করা হলেও তাতে কর্ণপাত করেননি বিজেপির সাংসদরা। যার ফলে, শপথগ্রহণের দ্বিতীয় দিন কার্যত হয়ে ওঠে স্লোগানের প্রতিযোগিতা। এবং এক চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।