সালটা ১৯৯৯। ২০ বছর আগে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবার পা রেখেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ১১ জন বাঙালি। পাকিস্তানকে হারিয়ে তাঁরা জানান দিয়েছিলেন, ‘আমরাও এসে গিয়েছি’। বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বড় দলের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে যে লড়তে পারে বাঙালিরাও, সেই প্রথম প্রমাণ দিয়েছিল পদ্মাপারের এই দেশটা।
ঠিক সেবারই বিশ্বকাপ-অভিষেক হয়েছিল আরও এক বাঙালির। ‘বাপি বাড়ি যা’ শটে যিনি ১৯৯৬-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে মাঠের বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। বিশ্ব ক্রিকেটে ‘অফসাইডের ভগবান’-এর উত্থান এ বঙ্গের একটা প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিল। বেহালার এই ছেলেটা যদি পারে, তা হলে বাকিরা পারবে না কেন? এমনটাই ভাবতে শুরু করেছিল বাঙালিরা।
কাট টু ২০১৯। টনটনের মাঠে ২ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আরও কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে বঙ্গ একাদশ। ঠিক এমন একটা সময়ে আর এক বাংলা বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করছে প্রেসবক্সে বসে। সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্ত ২২ গজের যুদ্ধক্ষেত্রে নেই এই বাংলার একজনও। পশ্চিমের বাঙালি এখন যেন শুধুই দর্শক।
সৌরভ তো বহু আগে ব্যাট-প্যাড তুলে রেখেছেন। মহারাজের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গেই যেন স্তিমিত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির ক্রিকেট-আভা। অন্যদিকে ঘরের পাশের আরেকদল বাঙালি এ বার সগর্বে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিশ্বকাপের আসরে। ওরা পারছে। আমরা পারছি না কেন? এই কথাটাই যেন বুদবুদ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে এপার বাঙালির বুকের মধ্যে।
বিশ্বকাপে চলছে বাংলাদেশের স্বপ্নের দৌড়।
সমস্যাটা ঠিক কোন জায়গায়? কবি জয় গোস্বামী বলছেন, ‘‘বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জেদ, তারুণ্য, তেজ, সাহস, সবটাই অবাক করে। এ পার বাংলায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেটা দেখা যায় না। এখনও দেখি সন্তানের কিটব্যাগ মা-বাবারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবুও রঞ্জি ট্রফি জিততে পারছে না বাংলা। বাংলার ক্রিকেটের এই হতশ্রী দশা দেখলে বিষণ্ণই লাগে।’’
বঙ্গ ক্রিকেটের এই টিমটিমে অবস্থা কেন? ঋদ্ধিমান সাহা আশা জাগিয়েও হঠাৎই মূলস্রোত থেকে দূরে সরে গেলেন। বাংলা থেকে বিরাট কোহালির সংসারে রয়েছেন একমাত্র মহম্মদ শামি। কিন্তু, তিনি তো বাংলার নন। এই রাজ্য থেকে বিশ্বকাপের দলে টিকিট পাচ্ছেন না কেন কোনও ক্রিকেটার?
বাংলার রঞ্জি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে ভারতের জার্সি পরে খেলার মতো ছেলে বাংলায় নেই। এটাই দুঃখজনক।’’ স্বাধীন ভারতে, তাঁর হাত ধরেই প্রথম এবং শেষ বার রঞ্জি ট্রফি জিতেছিল বাংলা।
কখনও কখনও নতুন করে, নতুন উদ্যমে শুরু করতে হয়। কখনও কখনও প্রতিবেশীর সাফল্যে নিজেদের নতুন করে উদ্বুদ্ধ করতে হয়। ওরা যদি বিশ্বজয়ের মঞ্চে লড়ে যেতে পারে, আমরা পারব না কেন! – এই ভাবনা যতদিন না বাংলার উঠতি ক্রিকেটারদের মনে হবে, ততদিন উন্নতি হবে না।