তামিলনাড়ুর যে ২৪টি জেলা খরাপ্রবণ, তার মধ্যে অন্যতম ভেলোর। এই ভেলোরের মানুষদের কাছে বেঁচে থাকার, জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জলের উৎস ছিল একমাত্র এই নাগানধি। কিন্তু ১৫ বছর আগেই এই নদীটি শুকোতে শুকোতে মৃতপ্রায় হয়ে যায়। মৃতপ্রায় এই নদীকেই চার বছরের নিরলস চেষ্টায় ফের বাঁচিয়ে তুললেন ২০ হাজার মহিলা৷
নাগানধি বাঁচাও প্রকল্পের ডিরেক্টর চন্দ্রশেখরণ কুপ্পান বলছেন, “কোনও নদীকে পুনরায় বাঁচিয়ে তোলার জন্য শুধু তার বহমানতার দিকে নজর দিতে হয়, তা তো নয়। নদীর গভীরতাও যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও নজর দিতে হয়। এক্ষেত্রে বৃষ্টির জলও যাতে মাটি শুষে নিয়ে জমিয়ে রাখে সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তো বটেই। তাই বৃষ্টি হলে সেটা এজাতীয় নদীর ক্ষেত্রে খুব কাজে দেয়। ” ২০১৪ সালে এই প্রকল্পটি শুরু হয়। সাফল্য আসে ২০১৮তে।
খুব একটা সহজ একেবারেই ছিল না কাজটা। প্রথমেই এওএল একটি টিম তৈরি করে নেয়, যে টিমের সদস্যরা প্রথমে স্যাটেলাইট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এলাকার ভূতত্ত্ব বিচার করে, জমি পরীক্ষা করে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মেপে কাজ করতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে কাজের অনুমতি দেওয়ার পরেই স্থানীয় মহিলাদের মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গারান্টি অ্যাক্টে কাজ করানো শুরু হয়। সেই মহিলাদের দৈনন্দিন রোজকারের উপায়ও হয়ে যায় সহজেই।
এই প্রকল্পে কর্মরত ৩২ বছরের নাথিয়া দড়ি বেয়ে বেয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি জানিয়েছেন, ভেলোরের কান্যায়মবাদি ব্লকের সালামানাথাম গ্রামে প্রায় ৩৬ টা কুয়ো খুঁড়েছেন তিনি। যেগুলো বৃষ্টির জলে ভরে উঠেছে। আর একবার সাফল্য আসায় তিনি বুঝেওছিলেন, এবার গ্রামে ফসলও ফলানো যাবে। এক একটি কুয়ো প্রায় ২০ ফুট গভীর, ১৫ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট চওড়া। এগুলো খুঁড়ে তৈরি করতে প্রায় ২৩ দিন করে লেগেছে ১০ জন শ্রমিকের।
দক্ষিণ ভারতের থেকে শত মাইল দূরে ভারতের উত্তর দিকেও একই ছবি রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের পউরি গাড়ওয়ালের প্রায় ১০০ জন গ্রামবাসী ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়েই নানা মাপের রিজ়ার্ভার তৈরি করতে পরিশ্রম করে চলেছেন। এমনকি তাঁরা নিজেরা সই সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন, যাতে বর্ষার জল ধরে রাখা যায় এবং সকলেই জলের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারেন। আরামে বাঁচতে পারেন।
উত্তর ভারত হোক বা দক্ষিণ ভারত এই জায়গাগুলো বারবার খবরে আসে তাদের জলকষ্টের জন্য। ভারতের কিছু জায়গায় এখনও কতটা জলের সমস্যা রয়েছে, কী করে সেখানকার মানুষরা দিন কাটান তা সারা বিশ্বের সামনে আসে এই ঘটনাগুলো থেকেই। এক একটা জায়গার জল বাঁচানোর প্রচেষ্টাগুলোই তখন বাকিদের কাছে নিদর্শন হয়ে থাকে, উপায় হয়ে থাকে। ভেলোরের ক্ষেত্রে ২০ হাজার মহিলার ৪ বছরের প্রচেষ্টায় ১৫ বছর আগে শুকিয়ে যাওয়া নাগানধিকে ২০১৮ তে আবারও স্রোতস্বিনী করে তোলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩৫০০ কুয়োর জল এবং প্রচুর নুড়ি পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে বর্ষার জল অগভীর খাতেও বয়ে চলতে পারে, এবং নদীটি বহমানতা পায়।