অবশেষে মিলল সরকারি সাহায্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই উলুবেড়িয়ার হতদরিদ্র আরজিনা শাহর পরিবার পেল ঘুরে দাঁড়ানোর সম্বল।
সময়টা ২০১৪ সালের মাঝ নভেম্বর। আরজিনার স্বামী কোরপান শাহকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। এরপর গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। সেই এনআরএস-এই জুনিয়ার ডাক্তারদের নিগ্রহের প্রতিবাদে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। সেই খবর এসে পৌঁছেছিল আরজিনা শাহর কাছেও। বলেছিলেন, আমার স্বামীকে যারা মেরেছিলেন, তাঁদের শাস্তি হবে তো? স্বামীহারার কাতর আর্জি শুনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া জেলা প্রশাসনের কাছে হতদরিদ্র পরিবারটি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্যের নির্দেশ দেন। দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় জেলা ও উলুবেড়িয়া মহকুমা প্রশাসনে।
কোরপান যখন জীবিত ছিলেন তখন স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের নিয়ে সেখানে একটি ঝুপড়িতে থাকতেন। স্বামী মারা যাওয়ার কিছু দিন পর জীর্ণ ঝুপড়ি ছেড়ে আরজিনা ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাছেই তাঁর মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। স্থানীয় মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ‘আবাস যোজনা’র ঘর পেয়েছিলেন তিনি। ইটের দেওয়ালের দশ বাই বারো ফুট সেই ঘরে গাদাগাদি করে বাস সাত জনের। দেখা হওয়ার পর সরকারি আধিকারিকরা আরজিনাকে জানান, রাজ্য সরকারের নির্দেশে তাঁকে ‘ডেস্টিটিউট মাইনরিটি উইমেন রিহ্যাবিলিটেশন স্কিম’-এ বাড়ি করার জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। রবিবারই আরজিনার হাতে সরকারি আধিকারিকরা তুলে দেন ৬০ হাজার টাকা। বাকি ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হবে পরে। পরিবারের সবাইকে জামাকাপড়, কিছু নগদ টাকা ও ত্রাণ হিসাবে চালও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের খাদ্য সুরক্ষা যোজনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক তুষার সিংলা বলেন, ‘আরজিনা যে এলাকার বাসিন্দা, সেই মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে একশো দিনের কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে। কোনও সমস্যায় পড়লেও যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে আমাদের সঙ্গে’।
দ্বারে লক্ষ্মী দেখে আভিভূত আরজিনা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সমস্ত কৃতিত্ব দিলেন তিনি। মুগ্ধ কন্ঠে বললেন, ‘যে মুখ্যমন্ত্রী আমার জন্য এত কিছুর ব্যবস্থা করেছেন, তাঁকে আমার সেলাম করতে বড় সাধ হচ্ছে। তাঁকে সেলাম করব কী করে? তবে সেলাম জানালাম আপনাদের (সংবাদমাধ্যম)। এত দিনে আমার একটা ব্যবস্থা হল’। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মানবিক কাজ করেছেন। আমি আরজিনার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাড়িতে যাব’।