বিগত কয়েকদিন ধরে স্বাস্থ্য পরিষেবায় রাজ্য জুড়ে চলছে অচলাবস্থা। এনআরএসে জুনিয়ার ডাক্তারের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত চারদিন ধরে অচলাবস্থা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার। জুনিয়ার ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে হাসপাতালগুলির সব পরিষেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসা করতে আসা একাধিক রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। এর মধ্যেই তিন দিনের এক শিশু এই কর্মবিরতির জেরে মৃত্যু হয় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। আর তারপর কিছুটা বদলাল ছবিটা। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে ফিরল সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেলেই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কোনও রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে ফেরানো হবে না। কর্মবিরতি শুরুর তিন দিনের মাথায় ওই দিনই হাসপাতালের ১৮ জন চিকিৎসকের পদত্যাগ করার কথা প্রথম সামনে এসেছিল। শুক্রবার অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলি গণ-পদত্যাগের পথে হাঁটলেও আপাতত সে পথে এগোয়নি সাগর দত্ত হাসপাতাল। চিকিৎসকেরা কাজ করতে সম্মত হওয়ায় রোগী ভর্তিও চলেছে সেখানে। কর্তৃপক্ষ জানান, বৃহস্পতিবার ১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। শুক্রবার বিকেল তিনটে পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২২।
সাগর দত্তে সপ্তাহের কাজের দিনে রোগী ও পরিজনেদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। শুক্রবার সকালে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, প্রায় সুনসান চত্বরে রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন রোগী। চার মাসের মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলেন দম্পতি। ওই হাসপাতালেই জন্ম শিশুটির। এ দিন বহির্বিভাগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার তারিখ ছিল। বহির্বিভাগ বন্ধ শুনে জরুরি বিভাগে মেয়েকে দেখাতে নিয়ে যান সাবা খাতুন নামে কামারহাটির বাসিন্দা ওই মহিলা। চিকিৎসক শিশুটিকে দেখেও দেন।
শুধু সাবা নন, অনেক দূর দূর থেকে আসা রোগীরা এ দিন ভিড় করেছিলেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। জনা কয়েক উর্দিধারী রক্ষী আর দুই পুলিশকর্মীর তত্ত্বাবধানে চার জন চিকিৎসক মিলে সামলাচ্ছিলেন জরুরি বিভাগ। সেখান থেকে রোগীরা যাতে ফিরে না যান, সে বিষয়ে তৎপর ছিলেন স্থানীয় পুর নেতৃত্বও। কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহার দাবি, তিনি গত দু’দিন ধরে হাসপাতালে থেকে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের চিকিৎসার তদারকি করছেন।
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক দিকে যখন এই অবস্থা, তখন অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ে অধ্যক্ষের ঘরে চলছে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। জরুরি পরিস্থিতি সামলাতে সুপার ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানেরা চার ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সুপার পলাশ দাস বলেন, ‘হাসপাতালের ১৫৫ জন জুনিয়র চিকিৎসক কর্মবিরতিতে আছেন। এই পরিস্থিতিতে পরিষেবা চালানো কষ্টসাধ্য। আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, রোগী ভর্তি ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকবে এবং জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। জরুরি অস্ত্রোপচারও হচ্ছে। স্ত্রীরোগ বিভাগ পুরোদমে কাজ করছে। কিন্তু সিনিয়র চিকিৎসকেদের পক্ষে সব কাজ সামলানো কত দিন সম্ভব, জানি না। প্রতিদিন এ সব নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।’ ১৮ জন চিকিৎসকের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েক জন চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট বিভাগে ইস্তফা জমা দিয়ে থাকতে পারেন। আমার কাছে এসে তা এখনও পৌঁছয়নি।’ সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মতো রাজ্যের অনেক হাসপাতালই আবার ধীরে ধীরে আবার পুরোনো ছন্দে ফিরতে চলেছে।