এনআরএস কান্ড নিয়ে উত্তাল গোটা বাংলা৷ ঠিক যে সময়ে এনআরএস-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন চিকিৎসা না করিয়েই সেই সময়েই নিজেদের কর্তব্যের প্রতি অবিচল থাকল বেশ কিছু সরকারী হাসপাতাল৷
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কাটোয়া হাসপাতাল, পুরুলিয়ার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ দেবেন মাহাতো (সদর)হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু রাখলেন চিকিৎসকরা৷ এমনকী ব্লাড ব্যাংকে সংকট যাতে না হয়, সেকথা ভেবে এসবের মাঝেই জুনিয়র চিকিৎসকরা নিজেরাই এগিয়ে গেলেন রক্তদানে৷
পরিষেবা ব্যাহত হলে জনগণের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া যাতে না হয়, তার জন্য শুক্রবার চিকিৎসকরা অবস্থান মঞ্চের পাশেই রোগী দেখেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ৷ পাশাপাশি তাঁরা হাতজোড় করে বার্তা দিলেন৷ বললেন, ‘আপনারা আমাদের শত্রু নন। আমরাও আপনাদের শত্রু নই। কিন্তু আমাদের অবস্থাটা বোঝানোর চেষ্টা করুন।’
শুধু মুখেই নয়, কিছু ক্ষেত্রে কাজ করেও সহমর্মিতা জানালেন কোনও কোনও আন্দোলনকারী চিকিৎসক৷স্টেথোও ধরলেন কেউ কেউ। অবস্থান মঞ্চের পাশে বসেই রোগী দেখলেন। চিকিৎসা করে প্রয়োজনীয় ওষুধ নেওয়ার কথা জানালেন। তবে কোনওভাবেই যে তাঁরা আন্দোলন থেকে বা দাবি থেকে পিছু হঠছেন না, তাও জানিয়ে দিলেন। শুক্রবার সকাল থেকে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক হওয়ার কথা৷এদিকে, পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও আন্দোলনে নেমেছেন এদিন। তবে পরিষেবা বন্ধ করে নয়। প্ল্যাকার্ড নিয়ে মৌন মিছিল করেছেন তাঁরা। কাটোয়া হাসপাতালেও জরুরি পরিষেবা চালু রাখতে রক্তদান করলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা৷
শুধু চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে কর্তব্য করা নয়। মুমূর্ষু রোগীদের রক্ত সরবরাহে যাতে সমস্যা না হয়, তাই রক্তদান করে নজির রাখলেন পুরুলিয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল দেবেন মাহাতো (সদর) হাসপাতালের চিকিৎসকরা৷ নার্স, সিনিয়র, জুনিয়র চিকিৎসক-সহ মোট ৪২জন এদিন রক্ত দিলেন৷ আসলে, পুরুলিয়ার মতো প্রান্তিক জেলায় পরিষেবা স্তব্ধ থাকলে মানুষজন প্রবল সমস্যায় পড়বেন, সেকথা মাথায় রেখেই শুধুমাত্র প্রতীকী কর্মবিরতি পালনের পর এখানকার চিকিৎসকরা পরিষেবা সচল রেখেছেন৷
অন্যদিকে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেও চিত্রটা একই৷ জরুরি বিভাগ সচল রাখলেন সিনিয়র চিকিৎসকরা৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি বিভাগেরই একাংশে অস্থায়ী আউটডোর বিভাগ খুলে পরিষেব চালু রাখার চেষ্টা করেন। টেবিল নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী বসলেন আউটডোরের টিকিট কাটতে। তিনজন সিনিয়র চিকিৎসক সেখানে বসে একের পর এক রোগী দেখলেন। মাঝে হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ নিজে এসেও রোগী দেখে গেলেন। কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, তারও খোঁজ নিলেন।