প্রথম মোদী সরকারের আমলে ব্যাঙ্ক ‘জালিয়াত’দের ‘রামরাজ্যে’ পরিণত হয়েছিল গোটা দেশ। সামনে এসেছিল একের পর এক ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা৷ তবে ধরা পড়ার আগেই কেন্দ্রকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, মেহুল চোকসিরা। যা নিয়ে মুখ পুড়েছে মোদী সরকারের। তবে ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার পর সামনে এল ব্যাঙ্ক জালিয়াতি নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য, যাতে ফের অস্বস্তিতে বাড়ল মোদী-শাহদের। বুধবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ২০০৮–০৯ সাল থেকে ২০১৮–১৯, এই ১১ অর্থবর্ষে এদেশে মোট ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সংখ্যা ৫৩ হাজার ৩৩৪টি। এর জেরে ব্যাঙ্কের ভাণ্ডার থেকে উধাও হয়েছে ২.০৫ লক্ষ কোটি টাকা।
জানা গেছে, প্রতারণার সংখ্যার হিসাবে ব্যাঙ্কগুলির শীর্ষে রয়েছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক ও এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। এদের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি জালিয়াতি হয়েছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে। তবে খোয়া যাওয়া টাকার বিচারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির। তথ্য জানার অধিকার আইনে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ মাসের ৩ তারিখ সংবাদ সংস্থা পিটিআই রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, গত আর্থিক বছরে মোট ৬,৮০১টি জালিয়াতির ঘটনায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির খোয়া গেছে ৭১ হাজার ৫৪২ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই সাংবাদিক বৈঠকে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানায় কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, বুধবার যে ১১ বছরের জালিয়াতির হিসাব দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০০৮–০৯ সাল থেকে ২০১১–১২ সাল পর্যন্ত জালিয়াতির দরুন উধাও হওয়া টাকার সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৫০১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। ২০১৩–১৪ সালে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির দরুন খোয়া গিয়েছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। এরপর কেন্দ্রে আসে মোদী সরকার। ২০১৪–১৫ সালে জালিয়াতির অঙ্কটা এক লাফে পৌঁছে যায় ১৯ হাজার ৪৫৫ কোটি ৭ লক্ষ টাকায়। ২০১৫–১৬ ও ২০১৬–১৭ সালে জালিয়াতির পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৮ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা ও ২৩ হাজার ৯৩৩ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা।
আর ২০১৭–১৮ সালে ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে উধাও হওয়া টাকার পরিমাণ আগের সব হিসাবকে ছাপিয়ে পৌঁছে যায় ৪১ হাজার ১৬৭ কোটি ৩ লক্ষ টাকায়। এককথায় প্রথম মোদি সরকারের শেষ চার বছরে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির দরুন উধাও হয়েছে ৮৩ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক মোট ৬ হাজার ৮১১টি প্রতারণার জেরে খুইয়েছে ৫০৩৩ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাঙ্কে প্রতারণার সংখ্যা ৬ হাজার ৭৯৩টি। কিন্তু খোয়া গেছে প্রায় ২৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক ২ হাজার ৪৯৭টি প্রতারণায় খুইয়েছে ১২০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। ২ হাজার ১৬০টি জালিয়াতিতে ব্যাঙ্ক অফ বরোদা খুইয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা।
শুধু তাই নয়। ২ হাজার ৪৭টি জালিয়াতিতে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক খুইয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৭০০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ১২ হাজার ৩৫৮ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কের ৫ হাজার ৮৩০ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ৯ হাজার ৪১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা উধাও হয়েছে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির জেরে। একইভাবে ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের ১১ হাজার ৮৩০ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা, কানাড়া ব্যাঙ্কের ৫ হাজার ৫৫৩ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা, ইউবিআইয়ের ৩ হাজার ৫২ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ও ইউকো ব্যাঙ্কের ৭ হাজার ১০৪ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা উধাও হয়েছে জালিয়াতি কাণ্ডে। অন্যদিকে, বেসরকারি ক্ষেত্রে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক ও ধনলক্ষ্মী ব্যাঙ্কের জািলয়াতির দরুন ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।