লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তারপর থেকেই বাংলায় এক অরাজকতা তৈরি করার চেষ্টা করে চলেছে গেরুয়া শিবির। তাঁদের তান্ডবে তটস্থ হয়ে উঠেছে বাংলা। অত্যাচারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে তৃণমূল সমর্থকরা। বাঙালি আক্রান্ত, সমূহ বিপদের মুখে বাংলা। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ- দুই গুজরাতি রাজনীতিক বাংলা দখল করতে চাইছেন, বাঙালি আবেগ দিয়ে তা রুখে দিতে হবে। আজ এমনই বার্তা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার হেয়ার স্কুল চত্বরে বিদ্যাসাগরের নতুন আবক্ষ মূর্তি উন্মোচনের সরকারি অনুষ্ঠান ছিল। ওই মঞ্চ থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বারা বার ঝরে পড়ল মোদ্দা এই কথাই। বিদ্বজ্জন পরিবৃত হয়ে ওই সভায় মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন যে বাংলাকে অপমান করা হলে বা রাজ্য থেকে বাঙালি খেদানোর চেষ্টা হলে, তিনি জীবন দিয়ে রুখবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘তাতে আমি বাঁচি মরি, কিছু যায় আসে না। নিজের প্রতি আমার কোনও দয়া মায়া নেই। কিন্তু বাংলার সংস্কৃতিতে কোনও আঘাত বরদাস্ত করব না।’ এখানেই তিনি থামেননি। এও বলেন, বাংলাকে গুজরাত হতে দেব না। গুজরাতকে আমি ভালবাসি। কিন্তু গুজরাত আর বাংলা এক নয়!
গোটা ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছিল গত ১৪ মে বিজেপির গুন্ডাবাহিনীর দাপটে উত্তপ্ত হয়েছিল কলকাতা। ওইদিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন গেরুয়া দলের কর্মী-সমর্থকরা। অমিত শাহের রোড শো শুরুর আগে ধর্মতলায় নির্বাচন কমিশনের গাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজস্ট্রিট ক্যাম্পাস শেষে সেই আক্রোশে বাদ যায় নি বিদ্যাসাগর কলেজও। ভাঙা পড়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তিও। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই ঘটনার পর শেষ দফায় যে ৯টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছিল, তার সব কটিতেই জিতেছে তৃণমূল।
এইদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় কখনও উঠে এসেছে বাংলার রাজনৈতিক হিংসার ঘটনার কথা, আবার কখনও রাজ্যপালের কথা। কখনও আবার গেরুয়া শিবিরকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘বাংলা ছেলের হাতের মোয়া নয়। এখানে যা ইচ্ছে তাই করা যায় না। বাংলাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।’
এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতির প্রসঙ্গও উঠে আসে তাঁর বক্তৃতায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালি নই? আমরা হিন্দু নই? কিছু বললেই বলছে মুসলমান তোষণ করি। এই যে মঞ্চে আবুল বাশার বসে আছেন। তাঁকে বলব আপনি চলে যান? আমি থাকি আর না থাকি ওই কাজ আমাকে দিয়ে করাতে পারবে না।’
প্রাদেশিকতা বাদের রাজনীতি এ দেশে নতুন নয়। এক সময়ে বালা সাহেব ঠাকরে সেই রাজনীতি করে সফল হয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতেও প্রাদেশিকতাবাদ ভরপুর বাস্তব। বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে। অসমে নাগরিক পঞ্জিকরণের সময় থেকেই হাতে খড়ি শুরু হয়েছিল। লোকসভা ভোটের পর সেই লাইন ধরে আরও দ্রুত গতিতে যেন হাঁটা লাগালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঙালি আবেগকে নিয়ে রাজনীতি করার বিরুদ্ধে এইদিন রুখে দাঁড়ান ‘রণংদেহি’ মমতা।