রাতের কলকাতা শহর। আর এই শহরেরই নানা রাস্তার ধারে কোনওমতে রাতের ঘুমটুকু ঘুমায় ফুটপাতবাসীরা। এবার রাতের শহরে এমন মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে ক্রমশই। তাই তাঁদের মাথা গোঁজার আস্তানা দিতে উদ্যোগী হল কলকাতা পুরসভা।
শহরের এই চেহারা পাল্টানোর জন্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রাতের শহরে ফুটপাতে বাসিন্দার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সেই তুলনায় শহরের বুকে নাইট শেল্টার বা রাতের থাকার জায়গা সেভাবে নেই বলেই মনে করছে কলকাতা পুর প্রশাসন। উপযুক্ত নাইট শেল্টারের অভাবেই রাতের ফুটপাতগুলি একের পর এক দখল হয়ে যাচ্ছে। ফুটপাত সাজানো পেভমেন্ট ব্লকগুলি নষ্ট হচ্ছে।
কলকাতা পুরসভার পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিভাগ সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে জানিয়েছিল, রাতের শহরে যত লোক ফুটপাতে থাকেন, সেই অনুপাতে নাইট শেল্টার নেই। এরপরই রাজ্য সরকারের সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে উঠে আসে, জমির অভাবের বিষয়টি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা পুরসভা শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডে রাতে ফুটপাতে কতজন থাকছেন, তা জানতে সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানেই দেখা যায়, শহরে রাতে ফুটপাতে বসবাসকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রিপোর্ট স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সুডা)-তে পেশ করে কলকাতা পুরসভা। তারপরই বৈঠক ডাকেন মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
নাইট শেল্টার তৈরির জন্য কলকাতা বন্দর, কলকাতা পুলিস, শিক্ষা দফতর, স্বাস্থ্য দফতর, কেএমডিএ’কে তাদের ফাঁকা জমি পুর প্রশাসনকে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিলেন তিনি। গত ২৮ মে’র কেএমডিএ’র কনফারেন্স হলে হওয়া বৈঠকে উপস্থিত পুলিস আধিকারিকদের মেয়র স্পষ্ট করে জানালেন, তাঁদের কাছে নাইট শেল্টারের যাবতীয় তথ্য দেওয়া হবে। ফুটপাত দখল করে কেউ শুয়ে থাকলে, তাঁকে যেন সঙ্গে সঙ্গে ওই নাইট শেল্টারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফুটপাত দখল করা চলবে না। মেয়রের কথায়, আমরা শহরকে সুন্দর করে তুলতে চাইছি। সেখানে ফুটপাত দখল করে কেউ শুয়ে থাকবেন, সেটা কোনওমতে চলতে দেওয়া যাবে না। তাই পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।
পুর তথ্যানুযায়ী, শহরে ৪৩টি নাইট শেল্টার রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি কলকাতা পুরসভার খরচে তৈরি হয়েছে। আরও চারটির নির্মাণকার্য চলছে। নতুন তিনটি তৈরির জন্য ডিপিআর পেশ করা হয়েছে সুডা’র কাছে। মেয়র যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা করে বৈঠকে নির্দেশ দেন, ফুটপাতে রাত্রিযাপনকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে আরও বেশি করে নাইট শেল্টার তৈরি করতে হবে। এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থাকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন তিনি।
এই বৈঠকে একাধিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন শহরের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রাতের ফুটপাতে যাতে কেউ শুয়ে না থাকেন সে ব্যাপারে পুলিশি নজরদারি, বিদ্যাসাগর সেতুর পার্শ্ববর্তী মসজিদ সংলগ্ন অংশে নাইট শেল্টার তৈরির জন্যে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনের কাছ থেকে জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব, বরো ১১ এবং ১২-তে ভূমি রাজস্ব এবং উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের কাছ থেকে তাঁদের জমিতে নাইট শেল্টার তৈরিতে ছাড়পত্রের অনুরোধ, সুকান্ত নগরের কেএমডিএ-র জমিতে নাইট শেল্টার তৈরির সিদ্ধান্ত ইত্যাদি।