বিশ্বকাপের অভিযান শুরু আর মাত্র কিছুক্ষণেই। খেলা শুরুর আগেই চনমনে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দু’বছর আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর দল হেরেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। আজ, বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগে বিরাট কোহালি জানিয়ে দিলেন, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁর দল খেলতে নামবে। এও শুনিয়ে দিলেন, ভারতীয় ভক্তদের প্রত্যাশা কী ভাবে পূর্ণ করতে হয়, তা-ও তিনি বুঝে ফেলেছেন।
বিরাট জানেন, গোটা ভারত আজ তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকবে। তামাম ভারতবাসী আজ উন্মুখ হয়ে আছেন প্রথম ম্যাচ জেতার স্বাদ অনুভব করতে। সকলেই চাইছেন আজ সাউদাম্পটনের মাঠে বিরাট-ঝড় উঠুক। কোহলি তাই জানালেন, “ দর্শকেরা আমার কাছে সেঞ্চুরি চাইবেই। নিজের সবটা দেওয়ার চেষ্টা করব”।
গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানালেন, “‘দেখুন, আপনি যদি পারফর্ম করেন এবং সেটা অনেকদিন ধরে করতে পারেন, প্রত্যাশা সব সময় থাকবে। এটাও ঠিক, আপনি কারও কাছে কোনও কিছু প্রমাণ করতে চাইছেন না। কিন্তু আমি যখন ব্যাট করতে যাই, সিঁড়ি দিয়ে নামি, লোকে বলবেই, ১০০ চাই। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি এটা শুনতে চাই না বা লোকে এসব বলুক, পছন্দ নয়। লোকে বলে, কারণ তারা টিমের জয় দেখতে চায়। লোকে আমার কাছে সেঞ্চুরি চাইবেই”।
২০১১ এবং ২০১৫ সালে ওপেনিং ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পরে এ বার বাড়তি কোনও চাপ কি অনুভব করছেন ভারত অধিনায়ক? উত্তরে ফের ছক্কা, “দীর্ঘদিন ধরে আপনি যখন ভাল পারফর্ম করবেন, তখন একটা প্রত্যাশা তৈরি হবেই। আমি জানি এ ধরনের প্রত্যাশাকে নিয়ে কী ভাবে এগিয়ে যেতে হয়। প্রত্যাশার চাপ থাকবেই, কিন্তু পাশাপাশি এও মনে রাখা দরকার, কারও কাছে কিছু প্রমাণ করারও নেই। আমি যখন ব্যাটিং করার জন্য ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসি, সমর্থকেরা আমার থেকে সেঞ্চুরির আবদার করে থাকেন। তবে এই ব্যাপারগুলো চলতেই থাকবে। এমন মনে করার কারণ নেই যে, আমি এ ধরনের কথাবার্তা শুনতে চাই না অথবা ভাল খেলার পরে সমর্থকেরা আমাকে কিছু বলবেন না। তাঁরা অবশ্যই এই দাবি জানাবেন, কারণ তাঁরা তো আপনার সঙ্গে দলেরও জয় দেখার প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে আসেন। ফলে আমার মূল লক্ষ্য থাকবে, আবারও সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারা। তবে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দলের জয়। সেই জয়ে আমার অবদান সেঞ্চুরিও হতে পারে অথবা ১৫০, ৫০, ৬০, ৭০ বা ৪০ রানও হতে পারে, তাতেও কোনও আপত্তি নেই আমার। আমি ইতিবাচক মন নিয়েই খেলতে নামব”।
সকাল সাড়ে দশটার উইকেটে খেলার জন্য সেরা দল নির্বাচন প্রসঙ্গে বিরাট বলেছেন, “আমরা জানি ইংল্যান্ডের আবহাওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। কখনও আকাশে মেঘ থাকবে। কোনও সময়ে আবার রোদ থাকবে। তা ছাড়া এখন দু’টি বলে খেলা হয়। ফলে উইকেট থেকে সুবিধা পাওয়ার মতো অবস্থা থাকলে অতিরিক্ত সিমার খেলতেই পারে। আবার ভাল ব্যাটিং সহায়ক উইকেট পাওয়ার পরেও যদি দেখা যায় আকাশ মেঘলা, তা হলে বিশেষ নজর রাখতে হবে প্রথম দশ ওভারের উপর। ইংল্যান্ডে বলের আচরণ যে ভাবে বদলে যায়, তা অন্য কোথাও এত দ্রুত হয় না। এ বার বোলারদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে গেলে যদি আপনি সকালের উইকেটে দুই সিমার, দুই স্পিনার অথবা দলে অতিরিক্ত সিমার নিয়ে খেলতে নামেন, তা হলেও লক্ষ রাখতে হবে, বিকেলের দিকে পিচের চরিত্র কী দাঁড়াচ্ছে। ফলে বোলারদের খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে”।
সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ প্রত্যয়ী ছিলেন কোহলি। তিনি আরও বলেন, “আসলে বিশ্বকাপ বলে শব্দটা নিশ্চয়ই বড় ব্যাপার। দেশকে নেতৃত্ব দেব, নিশ্চয়ই গর্বিত। কিন্তু দেশের হয়ে সব ম্যাচেই নামার আগে আমার এরকম অনুভূতি হয়। ২০১১ আর ২০১৫ সালে প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলাম, মনে আছে। কাল আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব। কিন্তু আমার সেঞ্চুরি নয়, টিমের জয়টা অনেক বেশি জরুরি হবে। যদি টিমের জন্য ১৫০ করতে হয় বা ৩০-৪০ রানও করতে হয়, সেটার জন্য সর্বস্ব দেব।’ ব্যক্তি নয়, টিম-এ তো টিমগেমের শেষ কথা। নতুন কিছু নয়। বিরাটও নতুন কিছু বলছেন না। তবে স্বীকার করে নিচ্ছেন, ক্যাপ্টেন হিসেবে এই টুর্নামেন্টই তাঁর জীবনে সবচেয়ে ‘কঠিনতম চ্যালেঞ্জ’ হতে যাচ্ছে। ইংরেজিতে ব্যবহার করলেন ‘দ্য টাফেস্ট চ্যালেঞ্জ’ শব্দটা। কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘টুনার্মেন্টের ব্যাপ্তিটা দেখুন। ফর্ম্যাটটাও। আমি কেন, যে কোনও ক্যাপ্টেনের কাছেই এটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হতে বাধ্য। প্রতিটি টিমের জন্য আলাদা আলাদা প্ল্যানিং দরকার হবে। খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।’ এই বিরাট জানেন, তাঁর টিম অন্যতম ফেভারিট। কিন্তু সে কথা ফলাও করে বলার কোনও কারণ দেখছেন না। বিশ্বকাপে প্রথমবার ক্যাপ্টে…