গতবারের মতো রামমন্দির ইস্যু না থাকলেও এবারের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন বিজেপির তুতুপের তাস ছিল জাতীয়তাবাদ। লোকসভা নির্বাচনের ফল দেখে, বিজেপির তোলা উগ্র জাতীয়তাবাদের ঢেউই গেরুয়া শিবিরের বিপুল জয়ের নেপথ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ভোট মিটতেই প্রমাণ হয়ে গেল, বিজেপির জাতীয়বাদ ছিল আগাগোড়াই লোকদেখানো। কারণ এবার তারকেশ্বরে সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা খুলে পদ্মফুলের পতাকা তোলার অভিযোগ উঠল তাদেরই কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্যে এমন ঘটনায় ছি ছি পড়ে গেছে গোটা এলাকায়।
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে গোটা জেলার মতো তারকেশ্বরেও বিজয় মিছিল করে বিজেপি। মিছিল আসে নাইটা মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েত অফিসের সামনে। অভিযোগ, আবেগে আত্মহারা বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা পঞ্চায়েত ভবনের জাতীয় পতাকা নামিয়ে বিজেপির পতাকা উত্তোলন করেন। চোখের সামনে এই ঘটনা দেখলেও বিজেপির তাণ্ডবের ভয়ে কিছু করতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনার কথা জানতে পেরে মালপাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ মনিরুল বলেন, ‘জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। পুলিশ ও বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’
আবার তারকেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূলের স্বপন সামন্তও বলেন, ‘যারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করে, তারা আবার জাতীয়তাবাদী দল কীসের? এটা একটা লজ্জার দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেল। মানুষ এখন এদের এই সব কীর্তি দেখছেন আর নীরবে চোখের জল ফেলেছেন। আমরা তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।’ অন্যদিকে, গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের কুমিরমোড়া গ্রামে বিজয় মিছিল শেষে তৃণমূলের অফিস ভাঙচুর, সামনের শহীদবেদিতে নিজেদের পতাকা টাঙিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।
ওদিন গেরুয়া শিবিরের মিছিল রাজাপুর থেকে সিংটি গ্রামের জোঁকায় আসে। তারপরই সেখানকার তৃণমূল কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। ভিতরের টিভি, টেবিল, চেয়ার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘কুমিরমোড়ার অফিসে তখন কেউ ছিলেন না। সে সময় কাপুরুষের মতো বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা ওই কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। সামনের শহীদবেদিতে টাঙানো তৃণমূলের পতাকা নামিয়ে ঝুলিয়ে দেয় বিজেপির পতাকা। রাজনৈতিক লড়াইয়ে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে এর বদলা নেওয়া হবে।’