গত ২৩ মে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিজেপির সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের সাক্ষী থেকেছে রাজ্যের মানুষ। কিন্তু তা সত্ত্বেও আবারও সম্প্রীতির ছবি ফুটে উঠল মমতার বাংলায়। এবার রোজা ভেঙে সাত বছরের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মেয়েকে রক্তদান করে নজির গড়লেন নদীয়ার এক মুসলিম যুবক।
মেয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। তাঁর প্রয়োজন এ পজিটিভ রক্ত। কিন্তু সেই রক্তদাতা খুঁজতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হয়েছিল মেয়ের বাবার। অতঃপর সন্ধান মেলে ওসমান গনি শেখ নামের এক যুবকের। কস্মিনকালে কখনও মেয়ের বাবাকে দেখেননি ওসমান। কিন্তু মেয়ের বাবার ফোন আসা মাত্রই তিনি ভেঙে ফেলেন রোজা। একবারের জন্যও দ্বিধা করেননি।
ইতিহাসের স্নাতকোত্তর ছাত্র ওসমানের কথায়, ‘আমার ফেসবুক প্রোফাইলে ফোন নম্বর এবং ব্লাড গ্রুপ দুটোই রয়েছে। সেখানে আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি, রক্তের প্রয়োজন হলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এক বন্ধুর কাছ থেকে মেয়েটির বাবা আমার নম্বর পেয়েছিলেন। রক্ত দিতে আমি একবারও ভাবিনি। কারণ, এই রক্তের কারণেই কয়েক বছর আগে কাছের এক মানুষকে হারাতে হয়। সেদিন থেকেই ঠিক করেছিলাম, মানুষের প্রয়োজনে রক্তদান করব।’
প্রসঙ্গত, মাছ বিক্রেতা গৌতম দাসের কন্যা রাখি থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগছে বিগত তিন বছর ধরেই। কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে রাখীকে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তারের জানান, মেয়ের খুব দ্রুত রক্তের প্রয়োজন। সেই রক্ত খোঁজ করতে করতে শেষে ওসমানের সন্ধান পান গৌতম বাবু। তাঁর স্ত্রী তাপসীদেবী জানান, ‘আমাদেরই এলাকার এক জন ওসমানের ফোন নম্বর দেন।’
ফোন পাওয়া মাত্রই ভোরে বাসে উঠে সকালের মধ্যেই কৃষ্ণনগর হাসপাতালে পৌঁছে গেছিলেন ওসমান। তাঁর কথায়, ‘অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে শুক্রবার রাতে একটি ফোন আসে। কাঁদতে কাঁদতে এক ব্যক্তি মেয়েকে বাঁচাতে আমার কাছে রক্ত চাইছেন। আমি তাঁকে কাল সকালেই হাসপাতালে পৌঁছে যাওয়ার আশ্বাস দিই।’
তবে ওসমান এ কথাও জানায়, ‘আমি উপবাস করছিলাম। ডাক্তাররা আমাকে বলেছিল, তুমি রক্তদান করতে পারবে না। তাঁরা আমাকে বিস্কুট আর জল খেয়ে নিতে বলে। রোজা ভাঙা ছাড়া আমার আর কোনও উপায় ছিল না।’
রাখির বাবা গৌতম দাস ওসমানের এমনতর সাহায্য পেয়ে আপ্লুত। তাঁর কথায়, ‘ওসমানের এই ঋণ বোধহয় আমি ভবিষ্যতে কখনও শোধ করতে পারবো না। পরবর্তী সময়েও আমাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ওসমান।’