দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই পিছু হঠতে বাধ্য হল মোদী সরকার। অবশেষে দেশ জোড়া সমালোচনার মুখে পড়ে জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়া থেকে সরিয়ে ফেলা হল হিন্দি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব। সংশোধন করা হল সেই খসড়া। এর ফলে পড়ুয়াদের জন্য হিন্দি আর বাধ্যতামূলক রইল না। বরং শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দ মতো ভাষা বেছে নেওয়া যাবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, চাপের মুখেই নতিস্বীকার করল কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, দিন দুই আগেই কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতির খসড়া পেশ করেন ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসির চেয়ারম্যান তথা ইসরোর প্রাক্তন প্রধান ডঃ কৃষ্ণস্বামী কস্তুরীরঙ্গন। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৬৮ থেকেই বহু স্কুলে ‘থ্রি ল্যাঙ্গুয়েজ ফরমুলা’ চলে আসছে। তা চালিয়ে যাওয়া উচিত। প্রাথমিক স্তর থেকে শিশুরা তিনটি ভাষাতেই সড়গড় হয়ে উঠবে। অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে স্থানীয় ভাষা, ইংরেজির সঙ্গে হিন্দি শিখতে হবে। হিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি, ইংরেজির সঙ্গে অন্য কোনও ভারতীয় ভাষা শেখার প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি।
এই প্রস্তাব আদতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা বলে মনে করছে বহু মানুষ। এই জাতীয় খসড়া শিক্ষানীতি নিয়ে দেশের সর্বত্র, বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রথমত, খসড়ার কথা প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। তাতে শামিল হয় এনডিএ-র শরিক এডিএমকে এবং পিএমকেও। অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির উপর জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দিলে দেশের বহুত্ববাদী চিন্তাধারায় আঘাত লাগবে বলে জানায় তারা। প্রতিবাদে সরব হন বাংলার বিশিষ্ট মহলও।
এরপরই চাপ সামলাতে আসরে নামতে হয় কেন্দ্রকে। তারা জানিয়ে দেয়, শিক্ষানীতির খসড়া থেকে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার শর্তটি বাদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ছাত্ররা চাইলে এক বা একাধিক ভাষা পরিবর্তন করতে পারেন। এবং তাদের ইচ্ছেমতো তিনটি ভাষা শিখতে পারেন।
নতুন সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘নমনীয়তার শর্ত মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যে সমস্ত পড়ুয়ারা এক বা একাধিক ভাষা পরিবর্তন করতে চান, তাঁরা ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীনই তিনটি ভাষার মধ্যে একটি বা তার বেশি ভাষার পরিবর্তন করতে পারবেন।’ এ ব্যাপারে পড়ুয়ারা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য নিতে পারবে বলেও জানানো হয় সংশোধিত খসড়ায়। যে ভাষায় স্কুলে পড়ার সুবিধা, সেটাই বেছে নেওয়া যাবে বলে সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে।