সঙ্ঘের চালেই বাংলায় বাজিমাত করেছে বিজেপি। এক্ষেত্রে তারা হাতিয়ার করেছে সঙ্ঘের ‘উত্তরপ্রদেশ মডেল’কে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, বাংলায় বিজেপিকে আটকাতে হলে মাঠে-ময়দানে তৃণমূলের সংগঠনকে আরও বিস্তৃত এবং মজবুত করতে হবে।
সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের বছর দু’য়েক আগেই বাংলার গ্রামে গ্রামে প্রথমে ৩৬ জন বিস্তারককে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ৪২টি কেন্দ্রেই পাঠানো হয় তাঁদের। শাসক দলের তৃণমূল স্তরের ‘বিক্ষুব্ধ’ কর্মীদের চিহ্নিত করে রাজ্য নেতাদের কাছে রিপোর্ট দিতে থাকেন তাঁরা। পাশাপাশি শাসক দলের উপর তলার নেতাদের সঙ্গেও গোপনে যোগাযোগ শুরু হয়। তবে সব চেয়ে জোর দেওয়া হয় সঙ্ঘ পরিবারের অন্য সংগঠনগুলির সঙ্গে সমন্বয়ে। বিজেপির একটি অংশের দাবি, সঙ্ঘের সংগঠন যেখানে যেখানে মজবুত, বিজেপি সে সমস্ত অঞ্চলেই ভাল ফল করেছে।
আরএসএস-এর এক উচ্চপদস্থ প্রচারকের দাবি, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে শুধু শাখার সংখ্যাই দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তার সংখ্যা প্রায় ১৫০০। বেড়েছে সঙ্ঘ পরিচালিত স্কুল এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এরা কেউই সরাসরি রাজনীতির কথা বলেন না। তাঁরা এক দিকে যেমন সামাজিক স্তরে ‘হিন্দুত্বে’র প্রচার করে মেরুকরণের আবহ তৈরি করেছেন, অন্য দিকে বিজেপির দলীয় কর্মীদের কাজের নিরন্তর মূল্যায়ন করেছেন।
দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, প্রার্থী নির্বাচনের সময় বার বার সমীক্ষা রিপোর্টের কথা বলেছেন শাহ। যা নিয়ে দলের অন্দরে বিস্তর বিতর্কও হয়েছে। ওই নেতার মতে, শাহের ওই সমীক্ষার অনেকটাই দাঁড়িয়ে সঙ্ঘ এবং দলের সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সম্মিলিত রিপোর্টের ভিত্তিতে। যে কারণে বহু জায়গাতেই রাজ্য নেতাদের কাছে যথেষ্ট অপরিচিত প্রার্থীও টিকিট পেয়ে গিয়েছেন। জায়গার নাম ধরে ধরে শাহ বলে দিয়েছেন কোথায় দলের জেতার সম্ভাবনা বেশি, কোথায় কম। রাজ্য নেতাদের অনেকেই তাঁর সেই ব্যাখ্যার সঙ্গে গোড়ায় দ্বিমত পোষণ করলেও ফলাফলে দেখা গিয়েছে শাহের কথাই ফলে গিয়েছে। আরামবাগের মতো আসনে দলীয় প্রার্থী জয়ের চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে, যা স্বপ্নেও কখনও ভাবেননি রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ।
তৃণমূল স্তরে দলকে যে আরও মজবুত করতে হবে সেটা ঠিকই বুঝেছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই ‘বঙ্গ জণনী’ এবং ‘জয় হিন্দ’ বাহিনী গড়ে দিয়েছেন মমতা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এখানেই থামলে চলবে না। দলীয় সংগঠনকে পৌঁছে দিতে হবে বাঙালির শোবার ঘরেও। এখন সঙ্ঘের এই বাড়বাড়ন্তের মোকাবিলায় তৃণমূল কীভাবে তাদের ঘুঁটি সাজায় সেটাই দেখার।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত