সালটা ১৯৯৯। উড়িষ্যায় এক খ্রিস্টান দম্পতি তাঁদের দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কুষ্ঠ রোগীদের জন্য কাজ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত গ্রাহম স্টেন্স ও তাঁর দুই সন্তানকে বীভৎসভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। আর সেই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল উড়িষ্যার বজরং দল। আর সেইসময় এই হিন্দুবাদী বজরং দলের রাজ্য প্রধান ছিলেন প্রতাপ সারঙ্গী। শেষ কিছুদিন ধরে এই প্রতাপ সারঙ্গীর নাম সোশ্যাল মিডিয়ায় ভরে গেছে।
মোদীর দ্বিতীয় ইনিংসের মন্ত্রীসভায় সোশ্যাল মিডিয়ার ‘হিরো’ প্রতাপ জায়গা করে নিয়েছেন। আর তাঁকে নিয়ে রীতিমতো প্রশংসার ঝড় উঠেছে নেটদুনিয়ায়। মোদীর মন্ত্রীসভার নতুন মন্ত্রী প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গীকে মিডিয়া মহান মানুষ হিসাবে তুলে ধরছে যে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া আসা করে, গরিব, কাজ করে মানুষের জন্য, নিজের রান্না নিজে করে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি হিসাবে। এমনকি একটা ভাইরাল হওয়া টুইটে তাঁকে বলা হয়েছে ‘উড়িষ্যার মোদী’।
নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া সারেঙ্গীর নথির মধ্যে দেখা গেছে তাঁর বিষয় সম্পত্তি বলতে আছে ১৬-১৭ লাখের মত। যা অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় খুবই কম। এর এই কারণেই তাঁকে মহান করে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে সারেঙ্গীর জমা দেওয়া নথির মধ্যে অন্যকে কিছু তথ্য আছে যা দৃষ্টিগোচর হয়নি সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনদের। তা হল তাঁর নামে থাকা কয়েকটি অপরাধমূলক কাজের তালিকা। দাঙ্গা, প্রমোটিং ইস্যুতে মারামারি, জবরদস্তি দখল, খুনের নেপথ্য কান্ডারি ইত্যাদি আরও অনেক।
তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য গ্রাহম স্টেন্স ও তাঁর দুই সন্তানকে পুড়িয়ে মারার পেছনে তাঁর ভূমিকা। ওই কেসে বহুবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এই সারঙ্গীকে। এছাড়াও ২০০১ সালের ডিসেম্বরে রাম মন্দির ইস্যুতে উড়িষ্যা বিধানসভার মধ্যে জোরজবরদস্তি ঢুকে ভাঙচুর করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বিধানসভাতে আক্রমণের জন্য দাঙ্গার অপরাধে জেল হয়েছিলো এই মহা মানবের। ২০০২ সালে উড়িষ্যা পুলিশ সারেঙ্গীকে গ্রেফতার করেন। দাঙ্গা, শ্লীলতাহানি, সরকারি জিনিস ক্ষতি ইত্যাদি অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। একসময় সারেঙ্গীর নেতৃত্বেই বজরং দল ও আরএসএস মিলিতভাবে তৎকালীন উড়িষ্যার খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিল।
এতকিছুর পরেও কি সত্যি তাঁকে মহান বলা চলে? নাকি আজকের মোদীর জৌলুসে সারেঙ্গীর সব পুরোনো গুরুতর অপরাধগুলো মানুষের কাছে ফিকে হয়ে গেছে? এত সহজেই কি মানুষ ভুলে যাবে আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার ‘হিরোর’ পুরোনো সব অত্যাচারের গল্প? উত্তরগুলো এখন অজানা। সময়ই এর উত্তর দেবে।