বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় মানবতার ধর্মে বিশ্বাসী। তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ে আস্থা রাখেন। সেই পথে হাঁটল বেথুন কলেজও। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেথুন কলেজের ফর্মের একটি স্ক্রিনশট প্রচুর শেয়ার হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ধর্মীয় পরিচয়ের জায়গায় রয়েছে ‘হিউম্যানিটিজ’ অর্থাৎ মানবতাবাদ। বেথুন কলেজকে দেখে উদ্বুদ্ধ হল বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজও। তাদেরও ভর্তির ফর্মে দেখা যাচ্ছে “হিউম্যানিটি” অপশনটিকে।
একই চিত্র মেদিনীপুর কলেজেও। সেখানেও ফর্ম ভর্তি করতে গিয়ে আবেদনকারী ছাত্রীরা দেখতে পাচ্ছেন, ধর্মের কলামে তালিকার প্রথমেই রয়েছে মানবধর্ম। হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্ট বা অন্য যে কোনও ধর্মকে বাদ দিয়ে মানবতাকে নিজের ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। আবার বারাসতে দেখা যাচ্ছে আরও এক ছবি। স্নাতকোত্তর স্তরে ভরতির ফর্মে জুড়েছে আরও এক দৃষ্টান্ত। “হিউম্যানিটির” সাথে সাথে বারাসতের স্নাতকোত্তর স্তরে ভরতির ক্ষেত্রে অনলাইন ফর্মে রাখা হল “ধর্মে অবিশ্বাসী”র অপশন বা “নন বিলিভার” অপশন।
কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ? বেথুন কলেজের অধ্যক্ষা মমতা রায় জানাচ্ছেন, গত বছরও কলেজে ভর্তির অনলাইন ফর্ম থাকলেও তাতে মানবতাকে নিজের ধর্ম বলে বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তিনি বলেন, “অনেক আবেদনকারী হয়তো কোনও ধর্মেই বিশ্বাস করেন না। তিনি হয়তো শুধু মানবধর্মে বিশ্বাসী। এই আবেদনকারীরা ওই কলামে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান-সহ নানা ধর্মের মধ্যে ‘অন্যান্য’ বলে যেখানে উল্লেখ থাকত তা বেছে নিতেন। অনেকে আবার লিখে দিতেন ‘নন বিলিভার’। এ বার থেকে তাঁরা নিজের মত আরও স্পষ্ট করে প্রকাশ করতে পারবেন।” অধ্যক্ষার মতে, মানবতা ছাড়া যে কোনও ধর্মই হয় না, সেই বার্তাও এর মাধ্যমে নবীন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। আর মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা বলছেন, ‘‘মানুষের প্রথম পরিচয় সে মানুষ। মানবতাই তার সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়। তাই কলামটি এমন রাখা হয়েছে।’
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, সব ধর্মেরই মূল কথা মানবতা। এখন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক সময়ে বিভেদ সৃষ্টি হয়। আসলে ধর্মে ধর্মে কিন্তু কোনও বিভেদ নেই। শীর্ষেন্দুবাবুর কথায়, “আজকাল অনেকেই ধর্মীয় পরিচয় দিতে চান না বা দিতে লজ্জা পান। সে ক্ষেত্রে মানবতাকে বেছে নেওয়ার এই সুযোগ থাকাটা ভাল। তাতে আবেদনকারীকে একটা স্বাধীনতাও দেওয়া হল।” সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই উদ্যোগ অনুসরণযোগ্য।”
প্রসঙ্গত, বেথুন কলেজ এবং বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ— উভয়ই সরকারি প্রতিষ্ঠান। ইদানীং দেশের বিভিন্ন নামীদামি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েই ‘ধর্ম’ চিহ্নিত করার অপশন থাকে না। ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা সাদরে গ্রহণ করেছেন সেই সিদ্ধান্ত। এবার সেই পথে হাঁটল বাংলার দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানও। ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেলেও কলেজের এই পদক্ষেপে এখন খুশি সকলেই। প্রাক্তনীরা রীতিমত গর্বিত। সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে প্রশংসাবার্তায়।