বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় মানবতার ধর্মে বিশ্বাসী। তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ে আস্থা রাখেন। এবার সেই পথে হাঁটল বেথুন কলেজও। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেথুন কলেজের ফর্মের একটি স্ক্রিনশট প্রচুর শেয়ার হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ধর্মীয় পরিচয়ের জায়গায় রয়েছে ‘হিউম্যানিটিজ’ অর্থাৎ মানবতাবাদ।
বেথুন কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত মহিলা কলেজ। ২০১৫ সালে ন্যাকের বিচারে ‘এ’ বিভাগে মনোনীত হয় এই কলেজ। এছাড়াও ২০১৯ সালে অর্থাৎ চলতি বছর এনআইআরএফ’-এও ৫০ স্কোর করেছে তাঁরা। এই বেথুন কলেজে ভরতি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আবেদন করতে হলে প্রথমেই দিতে হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য। ছাত্রী কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন সেই তথ্য অনলাইনে আবেদনের সময় প্রয়োগ করতে হচ্ছে। সেই অপশনে ক্লিক করলেই রয়েছে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের মত অপশনগুলি। আর সবার প্রথমেই আসছে ‘হিউম্যানিটি’ অপশন।
এখানেও নিজেদের চিন্তাধারার চমতকারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন বেথুন কর্তৃপক্ষ। কারণ এখানেও তাঁরা ফুটিয়ে তুলেছেন সেই আদর্শকেই – ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। নিজের ধর্ম সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার পরই বাকি তথ্যগুলো দিতে পারবেন আবেদনে ইচ্ছুক ছাত্রী।
তবে কেবল বেথুন নয়, মৌলানা আজাদ, জয়পুরিয়া, স্কটিশ চার্চের মতো বহু কলেজ এ পথে হেঁটেছে। মৌলনা আজাদেও বেথুনের মতোই ‘হিউম্যানিটিজ’ অপশন দেওয়া হয়েছে। স্কটিশ চার্চে আবার কেউ চাইলে নিজেকে সেকুলার অথবা ধর্মনিরপেক্ষ এমনকী ‘নন রিলিজিয়াস’ অর্থাৎ ‘কোনও ধর্মেই বিশ্বাসী নই’ হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন। জয়পুরিয়া কলেজের অভিনবত্ব হল, ফর্মে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় লেখা হয়েছে। ধর্ম পরিচয়ের অপশনে রয়েছে ‘এথিজম’ অর্থাৎ নাস্তিকতাবাদ। এই তালিকায় রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও। সেখানে আবার ধর্মীয় পরিচয় জানতেই চাওয়া হয়নি। কেবল সরকারি সুযোগ সুবিধা, স্কলারশিপের কারণে আবেদনকারী পড়ুয়া সংখ্যালঘু কি না জানতে চাওয়া হয়েছে।
‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। ভারতীয় সংস্কৃতি যুগে যুগে এই শিক্ষাই দিয়ে এসেছে আগামী প্রজন্মকে। এবার সেই আদর্শকে পাথেয় করেই শিক্ষাঙ্গনে নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলা তরুণদের এই বার্তাই দিল বেথুন কলেজ। চলতি শিক্ষাবর্ষে ভরতি প্রক্রিয়ায় তাদের যোগ করা এই অভিনব চিন্তা নজিরবিহীন।