মোদিকে হারাতে না পেরে কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফায় অনড় রাহুল গান্ধী। অন্যদিকে, তাঁকে দলীয় সভাপতির পদে রেখে দিতে অটল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। আর এই নিয়ে গত তিনদিন ধরে কংগ্রেসে চলছে নাটকীয় টানাপোড়েন। ফের শীঘ্রই ওয়ার্কিং কমিটি ডাকা হতে পারে বলে খবর। চলছে দফায় দফায় মিটিং। আজ সকাল থেকে রাহুল গান্ধীর তুঘলক লেনের বাড়িতে কখনও পৌঁছেছেন আহমেদ প্যাটেল, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কখনও জয়পুর থেকে উড়ে এলেন রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বন্ধুসম শচীন পাইলট। কিছুক্ষণ পরেই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। তাঁরা চলে যেতেই গুলাম নবি আজাদ, কে সি বেণুগোপাল, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্র বলছে, আপাতত মাসখানেক রাহুলকে সভাপতি পদে থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার মধ্যস্থতায় ‘আপাতত’ কিছুটা বরফ গলানোও গিয়েছে।
যদিও ইস্তফার ব্যাপারে এখনও অনড় রাহুল। বরং লোকসভায় দলের নেতা হতে রাজি। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সভাপতি পদে বিকল্প খুঁজে নিন। কিন্তু নেতারা তাঁকে জানিয়েছেন, ‘‘আপনার কোনও বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না। আর আপনি না থাকলে দল ভেঙে যাবে। দলের খোলনলচে বদলানোর জন্য আপনিই যা করার করুন।’’ রাহুলের সম্মতি পেলে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হতে পারে। একটি কমিটি গড়ে হারের পর্যালোচনা করা হতে পারে।
দলের নেতারা তাঁকে বলেছেন, শুধু সভাপতি হিসেবে নয়, কংগ্রেসের সংসদীয় নেতা হিসেবেও তাঁকেই চাইছে দল। তিনি সভাপতি পদে থাকুন, এই দাবি উঠেছে দেশ জুড়ে। এমনকী, অন্যান্য বিরোধী দল থেকেও এই দাবি আসছে। সব শুনে কিছুটা নরম হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। তবে, এখনও অবস্থান বদল করার কোনও খবর নেই। দলের শীর্ষ নেতাদের জোরাজুরিতে সংসদীয় নেতা হিসেবে কাজ করতে রাজি হয়েছেন তিনি। পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী সপ্তাহে আবার বৈঠকে বসবে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। দলের পক্ষ থেকে রাহুলের কাঁধেই সঁপে দেওয়া হয়েছে সংগঠনে প্রয়োজনীয় রদবদলের দায়িত্ব। এত সবের মধ্যে দলের অন্দরেই আওয়াজ উঠেছে নির্বাচনী বিপর্যয়ের এই মুহূর্তে দলের সভাপতি কীভাবে নিজেকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে নেন?
কেন এতটা অনড় রাহুল? কংগ্রেসের সূত্রের মতে, এর তিনটি কারণ। এক, সভাপতি হয়েও রাহুল অমেঠীতে হেরেছেন। তাই নিজের ও দলের হারের নৈতিক দায়িত্ব তিনি নিতে চান। দুই, কংগ্রেস গণতান্ত্রিক দল। রাজ্য নেতাদের উপর ভরসা রেখেছিলেন রাহুল। ভোটের আগে দাবি, আবদার মেনেছেন। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে নিজেদের পরিবারের গদি বাঁচাতে দলকে ডুবিয়েছেন তাঁরা। ফলে বেজায় ক্ষুব্ধ রাহুল। তিন, ভবিষ্যতে যাতে শুধু গাঁধী পরিবারের উপরেই আঙুল না ওঠে, তাই পরিবারের বাইরে কাউকে সভাপতি করে নিজে অন্য ভূমিকায় থাকতে চান। গত সপ্তাহে রাহুল ইস্তফা পেশের পর এক নেতা প্রশ্ন করেন, ‘‘জেনারেল যদি পালিয়ে যান, দলের কী হবে?’’ জবাবে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আমি তো পালাচ্ছি না। সভাপতি পদে থাকব না। কিন্তু আগের থেকে বেশি শক্তি দিয়ে লড়ব।’’
রাহুল যাতে পদ থেকে ইস্তফা না দেন, তার জন্য এম কে স্ট্যালিন ফোন করে অনুরোধ করেছেন। ফারুক আবদুল্লা, লালুপ্রসাদ যাদব থেকে শরদ পওয়ার, একই অনুরোধ জানিয়েছেন। এমনকি দক্ষিণী নায়ক রজনীকান্তেরও মত, রাহুলের ইস্তফা দেওয়া উচিত নয়। দিল্লিতে শীলা দীক্ষিত বলেছেন, অতীতেও ভরাডুবির পরে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রাহুলের নেতৃত্বেই ফের ঘুরে দাঁড়াবে কংগ্রেস। বীরাপ্পা মইলির বক্তব্য, ‘‘২০১৪ সালে দলের বিপর্যয়ের পরে রাহুল গাঁধীই দলকে চাঙ্গা করেছেন। তিনিই পারেন নেতৃত্ব দিতে।’’ কাল রাজস্থান কংগ্রেসও প্রস্তাব পেশ করে রাহুলকে ইস্তফা না দেওয়ার দাবি জানাবে।