লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরে গতকাল সদ্য নির্বাচিত সাংসদেরা উড়ে গেছিলেন দিল্লীর পার্লামেন্টে। তারমধ্যে ছিলেন যাদবপুর এবং বসিরহাটের নয়া সাংসদ মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান। তাঁদের পরনে ছিল জিন্স, শার্ট এবং পায়ে স্নিকার জুতো। গতকাল সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন তাঁরা। বিপত্তি শুরু তারপরেই। আবার মারাত্মক ভাবে ট্রোলড হতে হয় তাঁদের। আর তারপর থেকেই প্রশ্ন ওঠে এ কি মৌলবাদের দেশ!
শুধুমাত্র আধুনিক পোশাক পরার জন্যে ট্রোলড করা হয় মিমিদের। কে, কি পোশাক পরবে তা ঠিক করে দেবেন অন্য কেউ। এমন হয় নাকি! অশ্লীল পোশাক না পরলেই হলো। এমনকী এই পোশাক সংসদীয় রীতিনীতিও লঙ্ঘন করে না। গতকাল মিমিরা ছবি পোস্ট করার পর থেকেই নেতিবাচক কমেন্টের বন্যা বইতে থাকে। এমনকি প্রশ্ন উঠতে থাকে তাঁরা শাড়ি কেন পরেননি? সংসদ কি ছবি তোলার জায়গা?শুধু তাই নয়, নানারকম অশ্লীল মন্তব্যও ধেয়ে আসে তাঁদের দিকে।
দেশের সংসদ অর্থাৎ পার্লামেন্ট জাতির কাছে শ্রদ্ধার এবং রাজনীতিকদের কাছে পীঠস্থান। সেখানে ওয়েলে নেমে স্পিকারের সামনে চিৎকার করা, ভাঙচুর করা এবং কথা বলতে না দেওয়াটা মোটেই সঠিক আচরণ নয়। এটা বারবার সাংসদদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রয়াত লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জি। তেমনই নির্বাচিত সাংসদরা কী পোশাক পরবেন? তার কোনও নির্দিষ্ট বিধি নেই সংসদে এবং সংবিধানে। বরং বলা আছে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান মানুষের জীবনে প্রাথমিক চাহিদা। মৌলিক অধিকারে উল্লেখ করা হয়েছে এই বিষয়গুলি। যা নিয়ে সোচ্চার হতে পারেন সাংসদরা।
মিমিদের এই পোশাক কোনও ভাবেই সংসদীয় রীতিনীতি লঙ্ঘন করে না। তাহলে সংসদের ওয়েলে নেমে হট্টগোল করে সংসদ মুলতুবি করে দেওয়াটা সঠিক আচরণ? এতে তো দেশের মানুষের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়। তাঁর সমালোচনা করতে তো দেখা যায় না। প্রশ্ন উঠছে, সেখানে এভাবে পোশাক নিয়ে বিতর্ক হবে কেন? কারণ দেশে এবং সংসদে কোথাও পোশাক ফতোয়া জারি করা নেই। এই দেশটার নাম সিরিয়া, পাকিস্তান কিংবা ইরান–ইরাক নয়। সৌদি আরবেও মহিলাদের অগ্রাধিকার দিতে গাড়ি, বিমান এমনকী অফিসের চালিকাশক্তি করা হয়েছে। সেখানেও পোশাকের ফতোয়া নেই। তাহলে এই দেশে জিন্স, শার্ট কি দোষ করল? উঠছে প্রশ্ন।